প্রকৌশলী হতে চাইলে

ছোটবেলা থেকে অনেকের ইচ্ছা থাকে বড় হয়ে প্রকৌশলী হওয়ার। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীদের নামতে হয় ভর্তি পরীক্ষা নামের এক তুমুল যুদ্ধে। মেধা ও কৌশলের মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যেতে হয়।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য দেশে বর্তমানে দেশের চারটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, যথাক্রমে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) এবং বিশেষায়িত প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটেক্স রয়েছে। এ বছর সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে বুয়েট সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে না। তবে কুয়েট, রুয়েট ও কুয়েট একত্রে ভর্তি পরীক্ষা হবে।

বুয়েটে এ বছর দুই ধাপে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথমে এমসিকিউ পদ্ধতিতে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা এবং তারপর লিখিত ভর্তি পরীক্ষা। শিক্ষার্থীরা এখন সবাই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি এখানে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শেষ সময়ের প্রস্তুতি ও প্রচলিত ভুল নিয়ে আজকের লেখাটি।

প্রথমে বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করি। সাধারণত পদার্থ, রসায়ন, গণিত থেকে প্রশ্ন করা হয়। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এর পাশাপাশি ইংরেজি থেকেও প্রশ্ন করা হয়।

পদার্থ

যখন থেকে প্রস্তুতি শুরু করবেন, তখন থেকে কৌশলী হতে হবে। আমি কখন বুঝব যে একটি অধ্যায়ের সব টপিক সম্পর্কে আমার ধারণা আছে? এর জন্য যা করা যেতে পারে, প্রতিটি অধ্যায়ের শুরুতে শিখনফল আছে। অধ্যায়টি শেষ করে করে আমরা নিজেদের যাচাই করব যে আমরা সব শিখনফল পারি কি না। বইয়ের অধ্যায়ের শেষে কিছু তথ্য ও সূত্র দেওয়া থাকে। তা আয়ত্ত করতে হবে। সূত্র ভুল করা যাবে না । প্রয়োজনে সূত্রের প্রমাণ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।

বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান করতে হবে। এতে প্রশ্নপদ্ধতি সম্পর্কে তোমার একটি ভালো ধারণা তৈরি হবে। বিশ্লেষণ করে দেখবে কী রকম টাইপ প্রশ্ন হয়।
পদার্থবিজ্ঞান অংশে সূত্র ব্যাখ্যাসহকারে জানলে ৭০ শতাংশ সমস্যা সমাধান করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে সূত্রের সরাসরি প্রয়োগ হয়।
যে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে—
*একক পরিবর্তন বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।
*ক্যালকুলেটারে ডিগ্রি, রেডিয়ান কোন মাধ্যমে আছে, তা যাচাই করে নেওয়া।
*ফলাফলের শেষে অবশ্যই একক লিখতে হবে।

রসায়ন

রসায়নে বেশ কিছু টাইপ মুখস্থ–নির্ভর। বিশেষ করে কর্মমুখী রসায়ন, অর্থনৈতিক রসায়ন, ল্যাবরেটরি নিরাপদ ব্যবহার অধ্যায়গুলো। রসায়ন অংশে গাণিতিক সমস্যার পাশাপাশি অনুধাবনমূলক ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নও হয়ে থাকে। তাই এই বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। রসায়ন মানে বিক্রিয়া। রাসায়নিক বিক্রিয়া ভালোভাবে জানতে হবে। খাতায় লিখে বিক্রিয়া অনুশীলন করতে হবে। ভর্তি পরীক্ষায় খুব অল্প সময়ে উত্তর করা যায় রসায়ন অংশ।

রসায়ন বিষয়ে কিছু সূত্র ও গাণিতিক সমস্যা আছে। সূত্র ও সমস্যা সমাধান করার নিয়ম সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। জৈব যৌগ থেকে প্রশ্ন হয়ে থাকে। তাই এই অংশ বাদ দেওয়া ঠিক না। বরং কৌশল করে পড়া উচিত। যেই টপিকগুলো থেকে সাধারণত প্রশ্ন হয়, সেগুলো অনুশীলন করা। প্রশ্নব্যাংক সমাধান করা। জৈব যৌগের সব নামীয় বিক্রিয়া মনে রাখা। জৈব যৌগের রূপান্তর সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে।

গণিত

অনুশীলন হিসেবে বইয়ের সমস্যাগুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা লাগবে। কেননা, গণিত অংশে সমস্যা হুবুহু বই থেকে দেওয়া হয়। পদার্থ, রসায়নে প্রশ্ন প্যাঁচানো থাকলেও গণিতে খুব কম পরিমাণে থাকে। বিশেষ করে ত্রিকোণমিতি, বলবিদ্যা, স্থিতিবিদ্যা–সম্পর্কিত প্রশ্নগুলো বই থেকে করা হয়। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্যালকুলাস থেকে প্রশ্ন করতে পছন্দ করে। অন্তরীকরণ, যোগজীকরণ তাই বাদ দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ, এই অংশ থেকে অনেক নম্বরের প্রশ্ন করা হয়।

সূত্র সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। সূত্রের প্রমাণ সাধারণত চাওয়া হয় না। তবে এর প্রমাণ জেনে রাখা ভালো। প্রশ্নব্যাংক সমাধান করতে হবে। প্রতি টাইপের অন্তত একটি হলেও সমস্যার সমাধান করা উচিত।

আমি দিনে কটি অঙ্ক করলাম, সেটি বিবেচ্য বিষয় না। বিবেচ্য বিষয় হলো, আমি কত নিয়মে অঙ্কটি সমাধান করতে পারি। একই টাইপের ১০টি অঙ্ক করার চেয়ে, ১০টি টাইপের একটি করে অঙ্ক করা অনেক বেশি কার্যকর।

ইংরেজি

Functional English থেকে প্রশ্ন করা হয়। বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান করলে ভালো ধারণা পাওয়া যাবে। সাধারণত translation, preposition, parts of speech, article, connector, fill in the gaps, completing sentence, narration, punctuation থেকে প্রশ্ন করা হয়। সব বিষয়ে একটি কথা মাথায় রাখা দরকার যে একই জিনিস যেন বারবার পড়া না হয়। যেই টপিকে দুর্বল, সেটিও অনুশীলন করতে হবে। এটি না হলে অনেক টপিক বাদ পড়ে যাবে।

শেষ সময়ে যা যা করা যাবে না

১.
আত্মবিশ্বাস হারালে চলবে না
শেষ সময়ে মনোবল ধরে রাখা অনেক কঠিন। লক্ষ্য স্থির করে দৃঢ় প্রস্তুতি নিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই মনোবল হারালে চলবে না। তাহলে তুমি অন্যদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে পড়বে।
২.
স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা
পরীক্ষার আগমুহূর্তের কোনোভাবেই অসুস্থ হলে চলবে না। তাহলে প্রস্তুতিতে একটা বাধা আসবে। এ জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। পর্যাপ্ত পানি ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। নিয়মিত ঘুমাতে হবে। প্রয়োজনের কম ঘুম মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। তাই সুস্থ থাকতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম প্রয়োজন।
৩.
গ্যাজেটের অতিরিক্ত ব্যবহার
সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও গ্যাজেট থেকে বিরত থাকতে হবে। নিয়মিত আপডেট থাকতে হবে। গ্যাজেট স্বল্প সময়ের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার পড়াশোনার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
৪.
নিজের সঙ্গে অন্যের তুলনা
অন্তত ভর্তি পরীক্ষার সময় নিজের সঙ্গে অন্য কারও তুলনা না করা উত্তম। কারণ, তুলনা করতে গেলে অনেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। মনোবল হারিয়ে ফেলে। নিজের প্রতি শতভাগ আত্মবিশ্বাস রাখা উচিত।
৫.
আংশিক জ্ঞান অর্জন করা
কোনো টপিক বা বিষয়ের ওপর স্বল্প বিদ্যা অর্জন না করে তা পুরোপুরি জানা উচিত। এতে ওই টপিকের ওপর সব দুর্বলতা কেটে যাবে। তাই যেটাই শিখবে, পুরোপুরি শিখবে।

Source: Prothom Alo

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top