স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় যেখানেই আমরা পড়াশুনার কথা চিন্তা করে থাকি, আমাদের মাথায় আসে বেঞ্চ, চেয়ার এবং সামনে শিক্ষক। আমাদের চির পরিচিত শিক্ষার এই পরিবেশ অনেকাংশেই বদলে গেছে বিংশ শতাব্দীর এই যুগে। ডিজিটাল যুগে বসবাস করার ফলে আমরা সকলেই কমবেশি ই-লার্নিং কথাটির সঙ্গে পরিচিত। তবে আমাদের বর্তমান সময়ের জীবনে এটি অত্যাবশ্যকীয় করে তুলেছে কোভিড -১৯।
কম-বেশি আমাদের সবার জীবন চার দেয়ালের মাঝে আটকে গেছে এই মহামারির কারনে। মাসের পর মাস আমাদের শিক্ষা জীবন থেমে আছে। তাই আজ শিশু থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে মেয়েরা সবাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে অনলাইন এডুকেশনের উপর।
ইলেকট্রনিকস প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থাকে বলা হয় ইলেকট্রনিক লার্নিং বা সংক্ষেপে ই-লার্নিং। অর্থাৎ আমরা যদি ইন্টারনেটকে কাজে লাগিয়ে কোনো কিছু শিখে থাকি তাহলে সেটাই ই-লার্নিং। শিক্ষার্থীদের কাছে বিকল্প শিক্ষামাধ্যম হিসেবে দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে প্রযুক্তিনির্ভর ই-লার্নিং বা ই-শিক্ষা। সরাসরি ক্লাসে উপস্থিত না হয়েও এ ব্যবস্থায় অনলাইনে নিজের সুবিধামতো সময়ে শিক্ষালাভ করা যায়।
ই-লার্নিং কী
ই-লার্নিং এক ধরনের দূরশিক্ষণ (ডিসটেন্স লার্নিং) পদ্ধতি। বিভিন্ন দেশে দূরশিক্ষণ পদ্ধতি প্রচলিত। বাংলাদেশের উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়েও (বাউবি) চালু আছে এ পদ্ধতি। এ ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন – ব্যাকবন স্কুল, টেন মিনিট স্কুল এর মত প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ উদ্যোগে ডিজিটাল শিক্ষা সেবা প্রদান করে যাচ্ছে।
প্রচলিত দূরশিক্ষণ অর্থাৎ অফলাইন পদ্ধতির সাথে এর উল্লেখযোগ্য পার্থক্য হচ্ছে, শিক্ষার্থীকে সরাসরি ক্লাস কিংবা পরীক্ষায় অংশ নিতে হয় না। এ শিক্ষাব্যবস্থায় যুক্ত থাকতে শুধু ইন্টারনেটযুক্ত একটি কম্পিউটারই যথেষ্ট। সুবিধাজনক সময়ে অনলাইনে যুক্ত হয়েই চালিয়ে নেয়া যাবে পড়াশোনা। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষ করে কম্পিউটার, মোবাইল, ভিডিও, টেলিভিশন, ভিডিও কনফারেন্সিং, ওয়েবসাইট, ই-মেইল, সফটওয়্যার ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী একে অপর থেকে দূরে থেকেও যে শিক্ষাব্যবস্থা চালিয়ে নিতে পারে, তাই ই-লার্নিং।

তবে ইন্টারনেট ও কম্পিউটার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকতে হবে শিক্ষার্থীর। সরাসরি শিক্ষাব্যবস্থার সিলেবাসের সাথেও খুব বেশি পার্থক্য নেই এ পদ্ধতির। ই-লার্নিং তিন ধরনের : ০১. কমপিউটারভিত্তিক ট্রেনিং (সিবিটি), ০২. ইন্টারনেটভিত্তিক ট্রেনিং (ইবিটি) ও ০৩. ওয়েব ভিত্তিক ট্রেনিং (ডব্লিউবিটি)। এ শিক্ষাব্যবস্থা অনেকটা বৈশ্বিক। বিশ্বের যেকোনো দেশে থেকেই দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযুক্ত কম্পিউটার কিংবা স্মার্টফোনের মাধ্যমে অনলাইনে সরাসরি (লাইভ) ক্লাসে অংশ নেয়া যায়। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরবরাহ করা ই-মেইলে লগইন আইডি বা ইউজার আইডি দিয়ে নির্দিষ্ট সাইটে ব্রাউজ করতে হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় সব শিক্ষা উপকরণই এখানে পাওয়া যায়। এছাড়াও বেসরকারি ই-এডুকেশন ভিত্তিক কোম্পানিগুলো তাদের বিভিন্ন অ্যাাপের মাধ্যমে সব ধরনের শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করে থাকে।
ই-লার্নিংয়ে যেসব মাধ্যম ব্যবহার হয়
০১. স্ক্রিনকাস্ট, ০২. ই-পোর্টফলিও, ০৩. ইপিভিএসএস, ০৪. পিডিএ, ০৫. এমপি থ্রি প্লেয়ার, ০৬. ওয়েবসাইট, ০৭. সিডিরম, ০৮. ই-ডিসকাশন বোর্ড, ০৯. ই-মেইল, ১০. ব্লগ, ১১. উইকি, ১২. চ্যাট, ১৩. শিক্ষাব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার, ১৪. শিক্ষামূলক অ্যানিমেশন, ১৫. জরিপ বা ভোটিং, ১৬. ভার্চুয়াল ক্লাসরুম, ১৭. শিক্ষামূলক গেম, ১৮ ফেসবুক, ১৯ ইউটিউব, ২০ গুগল মিট, ২১ জুম ও এ সম্পর্কিত বিভিন্ন অ্যাাপ।
Reference: http://comjagat.com/home/articles/morearticles/6891