আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে অনেকের ধারনা এখন হাতের লেখা কোন কাজেই লাগে না। কারণ লেখার জন্য এখন আর কলম খাতা ব্যবহার করতে হয় না। লেখার জন্য অনেকেই এখন কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা ট্যাব জাতীয় স্মার্ট ইলেক্নিক্স ডিভাইস গুলো ব্যবহার করে থাকেন। এটা না হয় গেল অফিসের কিংবা ব্যক্তিগত বিভিন্ন কাজের কথা।
কিন্তু পরীক্ষার উত্তর পত্র! সেখানে তো কোনো ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে না। হাতের লেখা লাগবেই। এবং তখন তা সুন্দর হওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পরীক্ষক একজন শিক্ষার্থীকে তার হাতের লেখা, প্রশ্নের উত্তর সঠিক ভাবে দেওয়ার পারদর্শিতা ইত্যাদির মাপকাঠিতে বিচার করে থাকেন।
আর এক্ষেত্রে সুন্দর হাতের লেখার গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ অনেক সময় পরীক্ষক সুন্দর হাতের লেখার একটি খাতা দেখে মোহিত হয়ে যান। তাছাড়া সুন্দর হাতের লেখা একটি সুন্দর ব্যক্তিত্বের পরিচায়কও হয়ে থাকে। তাই আমাদের হাতের লেখা সুন্দর করার ব্যাপারে নজর দিতে হবে।
হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য কিছু কৌশল বা টিপস অনুসরন করা ঘেতে পারে। আজকের এই লেখার মাধ্যমে হাতের লেখা ভাল করার কিছু কৌশল বা টিপস প্রদানের চেষ্টা করা হল।
হাতের লেখা সুন্দর করতে চাইলে প্রথমে যে বিষয়টার দিকে নজর দিতে হবে তা হল সঠিক উপকরন বাছাই এ ব্যাপারে অনেকের ধারনা “ফাউনটেন পেন” ছাড়া সুন্দর করে লেখা সম্ভব নয়। কিন্তু এই ধারনাটি একদম সঠিক নয়। লেখার জন্য কেমন কলম বা পেন্সিল ব্যবহার করতে হবে সেটা সম্পূর্ন যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। যার যার আঙুলের সাথে সহজে মানিয়ে যায় অর্থাৎ যে যেমন ধরনের কলম বা পেন্সিলে স্বাচ্ছন্দবোধ করে সেগুলো ব্যবহার করা উচিৎ।
এবার আসা যাক খাতার কথায়। লেখার জন্য প্রথম দিকে নোটবুক জাতীয় অর্থাৎ লাইন টানা কাগজ ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে করে লাইন বেঁকে যাবে না।
হাতের লেখা সুন্দর করতে বসার ভঙ্গিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সোজা হয়ে বসতে হবে এবং যে হাত দিয়ে লেখা হয় না সে হাত (ডান হাতিদের ক্ষেত্রে বাম হাত এবং বাম হাতিদের ক্ষেত্রে ডান হাত) দিয়ে খাতা, প্যাড, কগজ, নোটবুক ধরে রাখতে হবে
হাত দিয়ে খাতা ধরে বা চেপে রাখলে দেহের ভারসাম্য রক্ষিত হয়, দেহ স্থির থাকে এবং ভাল হাতের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে। লেখার কাজে সাধারণত চেয়ার টেবিল ব্যবহার করা উচিৎ।
হাতের লেখা সুন্দর করতে কলম ধরাটাও গুরুত্বপূর্ণ
কলম ধরার নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। এটি ব্যক্তি বিশেষের উপর নির্ভর করে। কারণ প্রত্যেক মানুষের হাতের গড়ন একই রকম নয়। তাই সবাই কলমের একই স্থানে ধরে লিখবে এটা কখনও সম্ভব নয়। কলম ধরাটা নিজের স্বাচ্ছন্দের উপর নির্ভরশীল। তবে হাতের লেখা সুন্দর করতে কলমের নিবের কাছাকাছি ধরলে ভাল হয়। তবে কখনই কলম খুব শক্ত ভাবে ধরা যাবে না।
আমরা সাধারণত আঙুল দিয়ে কলম চেপে ধরে লিখি কিন্তু এটা নিয়ম নয়। হত্তাক্ষরবিদদের লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাব তারা আঙুল দিয়ে কলম বা পেন্সিল ধরে রাখেন মাত্র কিন্তু লেখেন বাহু এবং কক্জি ব্যবহার করে। এটা অনেক কঠিন নয় তবে এটা করতে হলে অনেক অনুশীলনী করতে হবে।
অনেকে লেখা সুন্দর করার থেকে দ্রুত লেখাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন এটা ঠিক নয়
লেখা কত দ্রুত শেষ হল এটা না দেখে বরং কত সুন্দর হল সেটা দেখা উচিৎ। লেখা সুন্দর করতে হলে অবশ্যই একটু ধীরে লিখতে হবে। লেখাকে সুন্দর অবয়ব প্রদানের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিৎ।
এবার নজর দিতে হবে প্রতিটি বর্ণ বা অক্ষরের দিকে
খেয়াল রাখতে হবে যেন প্রতিটি বর্ণ বা অক্ষর যথেষ্ট স্পষ্ট হয়। তারা যেন এক সাথে মিলে মিশে না থাকে। তাদের যেন আলাদা ভাবে বোঝা যায়।
এবার আসা যাক লেখার স্টাইল বা ধরনের ব্যাপারে
এই স্টাইল বা ধরন বিভিন্ন হতে পারে যেমন- সোজা (খাড়া)/ কাত (বাঁকা) তবে যেমনি হোক না কেন যা লিখবেন একই ভাবে লিখবেন। খেয়াল রাখতে হবে কোনো অক্ষর যেন বেশি মোটা বা চিকন না হয়।
বেশ কিছু অক্ষর আছে যেগুলো একই রকম দেখতে এদের একটাকে ভাল ভাবে লিখতে পারলে অন্য গুলোও সুন্দর ভাবে লেখা যাবে
যেমন- ‘ব’ সুন্দর হলে ক, র ধ, ঝ, ধা সুন্দর করে লেখা যবে।
লেখা সুন্দর দেখানোর জন্য লাইন সোজা হওয়াটা খুব জরুরী
এজন্য প্রথমে দাগ টানা খাতায় লেখা অনুশীলন করা উচিৎ।
যে কাগজটিতে লিখতে হবে তার উপরে, নীচে, ডানে, বামে মার্জিন টেনে নিতে হবে
মার্জিন না দিতে চাইলে ভাঁজ করে নিতে হব।
প্রতিটি অক্ষরের মাঝে খুব কম কিন্তু সমান দূরত্ব এবং প্রতিটি শব্দের মঝে এক অক্ষর পরিমান দূরত্ব রাখতে হবে।
হাতের লেখা সুন্দর করতে হলে আগ্রহ ও ইচ্ছা থাকতে হবে। নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল বা টিপস্ গুলো সম্পর্কে সঠিক ধারনা থাকতে হবে।