সাক্ষাৎকারে কোন প্রশ্নের কী উত্তর

চাকরির সাক্ষাৎকার মানেই টেবিলের ওপার থেকে ভেসে আসা প্রশ্নের তোড়। সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে যদি খাবি না খান এবং সামলে যেতে পারেন, তবেই বুঝতে হবে চাকরি নামক সোনার হরিণ আপনার খাঁচায় বন্দী হতে চলেছে। তবে এর জন্য সবার আগে পাড়ি দিতে হবে প্রশ্নরূপ সমুদ্র।

জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট জেটি সম্প্রতি সাক্ষাৎকারে হওয়া প্রশ্নের ধরন নিয়ে একটি জরিপ করেছে। তাতে প্রায় ৫০০ ব্যবস্থাপক ও ১ হাজার কর্মীর কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হয়। জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটি নিয়োগকর্তারা করে থাকেন, সেটি হলো, ‘নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন।’ প্রায় ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে সাক্ষাৎকার শুরুই হয়েছে এ প্রশ্ন দিয়ে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আগামী কয়েক দশকেও এ ধরনের প্রশ্নের ব্যত্যয় হবে না চাকরির সাক্ষাৎকারে।

এই জরিপে আরও বেশ কিছু প্রশ্নের আধিক্যের বিষয়টি উঠে এসেছে। এসব প্রশ্নের মধ্যে রয়েছে, কর্মক্ষেত্রে কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন কি না এবং তা কীভাবে সামাল দিয়েছেন, নেতৃত্বের গুণাবলি কী আছে, কেন বর্তমান চাকরি ছাড়ছেন ইত্যাদি। এ ছাড়া চাকরিপ্রার্থীর শক্তিমত্তা ও দুর্বলতার দিকগুলোও তার মুখ থেকেই জানতে চান অনেক নিয়োগকর্তা। ভুল করলে কী করেন—জরিপমতে সাক্ষাৎকারে এমন প্রশ্ন করেছেন প্রায় ৩৬ শতাংশ নিয়োগকর্তা। আবার ৪৮ শতাংশ নিয়োগকর্তা জানতে চান যে কীভাবে চাকরির সুযোগের কথা জানতে পেরেছেন প্রার্থী।

আসুন, সাক্ষাৎকারে সহসাই শুনতে হয় এমন কিছু সাধারণ প্রশ্ন ও সেগুলোর উত্তরের বিষয়ে এবার জেনে নেওয়া যাক—

১. নিজের সম্পর্কে বলুন

এই প্রশ্নটি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই রচনা পড়ার মতো করে নিজের চাকরি জীবনের ফিরিস্তি দিতে শুরু করবেন না যেন। বরং যে চাকরিটি করতে চাইছেন, তার জন্য আপনি কতটা উপযুক্ত, সেটি বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে। এ জন্য প্রথমে বর্তমান কোনো চাকরি থেকে থাকলে সেখানে নিজের কাজ সম্পর্কে নিয়োগকর্তাকে জানাতে পারেন। কীভাবে সেই কাজে নিজেকে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন, সেটিও জানাতে ভুলবেন না। সবশেষে কাঙ্ক্ষিত পদের জন্য আপনি কতটা উপযুক্ত, সেটি ব্যাখ্যা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই সবগুলো বিষয় জানানোর জন্য লম্বা সময় কিন্তু পাওয়া যাবে না। তাই সংক্ষিপ্ত ও নিখুঁত উত্তর আগে থেকেই প্রস্তুত রাখতে হবে।


২. আপনার দুর্বলতা কী কী?

সাক্ষাৎকারে এটি অন্যতম জনপ্রিয় প্রশ্ন। চাকরিদাতারা এই প্রশ্নের মধ্য দিয়ে প্রার্থীকে একটু বেকায়দায় ফেলে দিতেই পারেন। নিজের দুর্বলতা সম্পর্কে স্পষ্টভাষী হওয়া সহজ তো নয়! কিন্তু চাকরি পেতে গেলে এই প্রশ্নের উত্তরে যথাসম্ভব সদুত্তর দেওয়া প্রয়োজন। কৌশলী উত্তরে নিজের দুর্বলতাগুলো উল্লেখ করার সঙ্গে সঙ্গে শক্তিমত্তার দিকগুলোও ফুটিয়ে তুলতে হবে। সেই সঙ্গে নিজের উন্নতির জন্যও যে কাজ করছেন, তা জানাতেও ভোলা যাবে না।

৩. কেন চাকরি ছাড়লেন? কেন চাকরি নেই?

বর্তমান চাকরি কেন ছাড়ছেন বা বেকার হলে, কেন চাকরি নেই—এই দুটি প্রশ্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যৎ নিয়োগকর্তা এর মধ্য দিয়ে আপনাকে কেন চাকরি দেবেন, তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করতে পারেন। ভুলেও বর্তমান নিয়োগকর্তার বিষয়ে সমালোচনা করতে যাবেন না। এটি একেবারেই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। বরং বর্তমানের তুলনায় ভবিষ্যতের কর্মস্থলে কী কী সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন এবং সেই অনুযায়ী কীভাবে নিজের ক্যারিয়ার সাজাতে চান, সেই সব বিষয়ে কথা বলতে পারেন। যদি বেকার থাকেন, তবে সেটি সরাসরি জানিয়ে দিন। এতে কুণ্ঠার কিছু নেই। বরং পুরো বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করতে হবে।

৪. আপনার শক্তিমত্তা কী কী?

দুর্বলতার পাশাপাশি চাকরিপ্রার্থীর শক্তিমত্তা সম্পর্কেও জানার চেষ্টা করেন সাক্ষাৎকারগ্রহীতারা। এমন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করাটা বেশ স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে অযথা বিশেষণ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বরং নিজের শক্তিশালী দিকগুলো প্রমাণ করার চেষ্টা করতে হবে। যেমন আপনি যদি যেকোনো সমস্যা সমাধানে পটু হয়ে থাকেন, তবে একটি উদাহরণ দিয়ে তা বোঝানোর চেষ্টা করুন। যদি আপনার মধ্যে নেতৃত্বগুণ থেকে থাকে, তবে তা শুধু মুখে মুখে দাবি করার বদলে কোনো ঘটনার উদাহরণ দিয়ে কীভাবে তা সামাল দিয়েছিলেন, সেটি জানান। এতে আপনার শক্তিমত্তা নিয়োগকর্তার সামনে মূর্ত হয়ে উঠবে এবং তিনি বুঝতে পারবেন, আপনি কতটা উপযুক্ত।

৫. আপনাকে কেন নেব?

সাক্ষাৎকারে এমন প্রশ্ন এলে বুঝবেন, নিজেকে যথোপযুক্তভাবে তুলে ধরার সর্বোত্তম সুযোগ আপনি পেয়ে গেছেন! এই সুযোগটিকে কাজে লাগাতে পারাটা অবশ্য সহজ নয়। এ জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, নিজের যোগ্যতা ও গুণাবলি সম্পর্কে বলার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা দেয় এই প্রশ্নটি। তাই নিজের উপযুক্ততা ও দক্ষতা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিন্তু নিখুঁত উপস্থাপনা দিতে হবে। শুধু কাজ নয়, আপনি যে ভালো ফলাফলও এনে দিতে পারবেন, সেটি জানান আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে। ভবিষ্যৎ কর্মস্থলে আপনি কতটুকু খাপ খাওয়াতে পারবেন, সেটি জানাতেও ভুলবেন না যেন। হয়তো এই প্রশ্নের উত্তরেই নিশ্চিত হতে পারে আপনার ভবিষ্যৎ চাকরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top