সঞ্চয় কেন এবং ছাত্রজীবনে সঞ্চয়ের ৫ উপায়

হাতখরচ পাওয়া ছাত্র- সঞ্চয়ী হতে চান সবাই। কিন্তু, বেহিসাবি স্বভাবের কারণে অনেকেরই তা হয়ে ওঠে না। সঞ্চয় করতে চাইলেও পছন্দের জিনিসটির জন্য নির্ধিধায় খরচ হয়েই যায়। আর বিপদে আপদে পরলেই তাই মনে হয়- “ইশ! অকারণ খরচগুলো না করলেই হতো”। প্রচলন বলে খরচের পরবর্তী অবশিষ্ট সঞ্চয় না করে, সঞ্চয় পরবর্তী অবশিষ্ট খরচ করার কথা। কেননা আজকের সঞ্চয় হতে পারে আপনার আগামীর বন্ধু। তাই চলুন, সঞ্চয়ী হয়ে ওঠার কিছু কৌশল জেনে নেয়া যাক।

১. এখন থেকেই সঞ্চয় করুন

নিয়ন্ত্রিত মুদ্রাস্ফীতির অর্থনীতিতে মাসিক রোজগারে মাস চলতেই মধ্যবিত্তের হিমশিম খেতে হয়। হয়ত মনে হয় “কতটুকুই সঞ্চয় হবে? আয় একটু বাড়লে বরং করা যেত”। এরকমটা ভাবলে হয়ত কখন হবেই না। আপনি শিক্ষার্থীই হোন কি চাকরিজীবী- আজকেই একটি মাটির ব্যাংক অথবা তালা দেয়া কাঠের বাক্স কিনে আনুন! টিফিনের খরচ থেকে দৈনিক ৫টাকা, হেঁটে ১৫ টাকা রিকশা ভাড়া-স্ল্প হলেও এভাবেই সঞ্চয়ের শুরু। কমবয়সে সঞ্চয়ের অভ্যাস দূরদর্শিতার পরিচয় দেয়।

২. সঞ্চয় একাউন্ট ব্যবহার করুন

হাতে টাকা থাকলেই খরচ হয়ে ঘায়। কিন্তু, ব্যাংকে প্রতি মাসে টাকা সঞ্চয় করে রাখলে প্রয়োজনের সময় এককালীন কিছু গোছানো টাকা হাতে পাওয়া যায়। ব্যাংক একাউন্ট এর মাধ্যমে টাকা সঞ্চয় করা একটি সহজ ও সুরক্ষিত উপায়। প্রত্যেক মাসে আপনার আয়ের ক্ষুদ্রাতিক্ষুত্র অংশও যদি ব্যাংকে জমা রাখেন, তাহলে ভবিষ্যতের প্রয়োজনে এটা সহায়ক হবে। আপনার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে হলেও একটি সঞ্চয় একাউন্ট এখনই খুলে ফেলুন।

৩. ছোট খরচগুলো সামলে নিন

অনেকেই মনে করি, খুঁটিনাটি কিছু খরচ না করলে জীবন সাচ্ছন্দের হয় না। ওই একটুখানি পথ, তাও আবার রিকশায় ওঠা! হেঁটে গেলে কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্যেও উপকার হয়। এভাবেই ঝেড়ে ফেলতে হবে অতিরিক্ত খরচের অভ্যাসগুলো: ভেবে বের করতে হবে আর কোন ক্ষেত্রে ছোট অভ্যাসগুলর পরিবর্তন প্রয়োজন কিনা। প্রয়োজনের বাইরে একটু-আধটু খরচ করার কথা ভাবতেই পারেন, কিন্তু এই ছোট-খাটো খরচগুলো সামলে নিলেই অনেকটা সঞ্চয় হয়ে যায়। এর মানে এটাও না যে সঞ্চয়ের জন্যে মনের সকল খুঁটিনাটি শখ বিসর্জন দেবেন। বেরিয়ে ৫ টাকার বাদাম না খেলে কি বিকেলের হাঁটাটা জমে? এগুলো নিশ্চিত রাখতে আপনার দৈনিক বাজেটে আলাদা করে একটা জায়গা রাখুন, তাহলে সঞ্চয় থেকে এগুলো খরচ হবে না। কথায় আছে, “ক্ষুদ্র ক্ষুত্র বালু কণা, বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ, সাগর অতল”। এই সামান্য খরচগুলো একটু মানিয়ে চললেই দেখবেন সঞ্চয়ে খুশি হবার মতন কোন অংক আপনি জমিয়ে ফেলেছেন।

৪. একটা বাজেট করে ফেলুন

প্রতিদিন আমাদের কম বেশি নানান খরচ করতে হয়। এর মাঝে কিছু থাকে রুটিন খরচ- যার মাঝে কিছু দৈনিক, কিছু আবার মাসিক। এই খরচগুলোর ধাঁচ অনুধাবন করতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন নিজের দৈনিক এবং মাসিক খরচ নিয়মিত একটা খাতায় লিখে ফেলা। লিখে রাখা খরচের  নমুনা থেকে আপনি আপনার দৈনিক এবং মাসিক রুটিন খর্চগুলোর সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা পেয়ে যাবেন। খরচ অনুযায়ী বাজেট করে ফেলুন। বাজেট অনুযায়ী দৈনিক খরচের টাকা পকেটে বা মানিব্যাগে নিয়ে বের হতে পারেন। চেষ্টা করবেন সেই বাজেট এর বাইরে কোনো অতিরিক্ত খরচ না করতে। তবে, বিপদ-আপদ তো আর বলে-কয়ে আসে না। তাই নিরাপত্তাস্বরূপ অতিরিক্ত কিছু টাকা সাথে রাখতে ভুলবেন না। বাজেট করার সময় খেয়াল রাখবেন কোনোভাবেই যেন ব্যয় আপনার মাসিক আয়কে অতিক্রম না করে এবং সঞ্চয়ের হিসাবটাও যেন সে বাজেটেই উল্লেখ থাকে। অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন দৈনন্দিন খরচের জন্য এতো কম বাজেটের মাঝে আবার সঞ্চয় করার অবকাশ কোথায়? কিন্তু বাজেট করার সময় একটু চিন্তা করে অতিরিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় খরচণ্ডলো কমিয়ে ফেললেই দেখবেন সঞ্চয় বের হয়ে আসছে।

৫. ইচ্ছে শক্তিটাই আসল

কথায় আছে, “ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়”। তাই বলছি, ইচ্ছে শক্তিই হল মূল। পথে-ঘাটে, বাজারে অনেক কিছুই চোখে পরলে কিনতে ইচ্ছা করে। কিন্তু কিছু কেনার সিদ্ধান্ত নেবার আগে একটু ভেবে দেখুন জিনিসটা কেনা আর্দৌ জরুরী কিনা; “অন্য কোনভাবে এই চাহিদা কি মিটবে?” এগুলো ভাবলেই বুঝতে পারবেন কোনটা অতিরিক্ত খরচ আর কোনটা অপ্রয়োজনীয়। ঘন ঘন নতুন পোশাক-আশাক কেনা কিংবা প্রায়শই রেস্টুরেন্টে খেতে ঘাওয়া- এরকম আরো দুই একটা অভ্যাস একটু নিয়ন্ত্রণ করলেই দেখবেন অর্থ সঞ্চয় কোন ঝামেলার বিষয় নয়। তাছাড়া আপনার খরুচে বন্ধুদের সংস্পর্শে যদি বেশীই খরচ হয়ে গেলে একটু বুঝে চলাই ভালো। পরিবারের কারো হঠাৎ অসুস্থতা কিংবা নিজের কোনো শখ সঠিকভাবে পূরণ করবার সক্ষমতা দিতে পারে সঞ্চয়। অনেকেই আছেন, ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও বিনিয়োগের মাধ্যমে নিজের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন করতে চান। তাদের জন্য সঞ্চয়ের বিকল্প নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top