শেষ মুহুর্তের ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি?

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্নাতক ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ও আবেদনের যোগ্যতা ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। এবার জিপিএ এর উপর মাত্র ২০ নম্বর থাকছে। তাই পরিশ্রম করে যে এগিয়ে যাবে সেই হবে বিজয়ী।

সময় খুবই কম তাই এখন থেকে একদম শেষ মুহুর্তের প্রিপারেশন নিতে হবে। আজকে এই ইউনিটের প্রিপারেশন মজবুত করতে কিছু প্লানিং শেয়ার করছি। তার আগে প্রশ্ন পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিই—

এমসিকিউ- ৩০ নম্বর
লিখিত- ৫০ নম্বর
জিপিএ- ২০ নম্বর
মোট- ১২০ নম্বর

ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করার পূর্ব শর্ত হলো বেসিক ক্লিয়ার করা। বেসিক ক্লিয়ার করতে হলে প্রতিটি বইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের অগাধ বুৎপত্তির বিকল্প নেই৷ প্রতিটি বিষয়ের ভালো প্রিপারেশন ও বেসিক ক্লিয়ারের জন্য কিভাবে পড়তে হবে, তা নিচে বিস্তারিত বলছি—

রসায়ন
ইন্টারে যা পড়েছো ওটা পড়লেই চলবে। তবে কনভেনশন অনুযায়ী— ১ম পত্রের ১ম+৫ম চ্যাপটারটা একটু কষ্ট করে হাজারি স্যার (এটাই মূলত) এবং কবির স্যার (যদি সম্ভব হয়) পড়ে ফেলবা কারণ এখান থেকে জ্ঞানমূলক প্রশ্ন হবে। তাই তথ্যগুলো সরাসরি বই থেকে তুলা হবে আর এই দুইটা বই যেহেতু প্রচলিত তাই তোমারও উচিত এটা অনুসরণ করা 

বাকি চ্যাপটারগুলা একটু বেসিক বুঝে বুঝে করবে এবং অবশ্যই বিগত সালের প্রশ্ন ঘাটাঘাটি যদি করো তাহলে দেখবে যে ম্যাথমেটিক্যাল প্রশ্ন খুব কম দেয় (২-১টা) এবং বেসিক যাচাই করার উদ্দেশ্য থাকে ঢাবির টিচারদের। তাই এ অংশে বেসিক বুঝার চেষ্টা করবে।

১ম পত্রে এভাবে ২য়+৩য়+৪র্থ চ্যাপটার কভার করবে তুমি যেই বই ইন্টারে পড়েছিলা।আর পুরনো সিলেবাসের প্রশ্ন দেখার প্রয়োজন নাই যেমনটা প্রশ্নব্যাংকে আগের সিলেবাসের প্রশ্ন পাবে ওগুলা বর্জন করতে পারো তবে মাঝেমাঝে পুরানো সিলেবাসের প্রশ্নও দিয়ে দিতে পারে যেমনটা ২০১৭ ও ১৮ সালে হয়েছিলো তবে ২০১৯ সালের ঢাবি প্রশ্নে যেহেতু পুরাটা নতুন সিলেবাস অনুসারে করা হয়েছে তাই আশাবাদী থাকতে পারো এবারও নতুন সিলেবাসই ফলো করা হবে। “বন্ধন ক্রম” জিনিস একটু শিখে নিও যেহেতু দুইবারের মত দিয়েছিল।

২য় পত্রে জৈব যৌগ অনেকেই আমরা ইন্টারে কম পড়ি বা অনেকে বাদ দিই। কিন্তু এই জৈব যৌগ থেকেই কিন্তু ঢাবিসহ সকল পাব্লিক ভার্সিটিতে প্রচুর প্রশ্ন থাকে ধরা হয় রসায়ন প্রশ্নের ৩০%+ জৈব যৌগ থেকে হয়।কাজেই একটু কষ্ট হলেও শিখে নাও জৈব যৌগ। যদি প্রশ্নব্যাংক ঘাটো  তাহলে দেখবে যে ঢাবিতে নিদির্ষ্ট কিছু জায়গা থেকে সবসময় জৈবযৌগের প্রশ্ন করা হয়। যেমন: ক্যানিজারো, অ্যালডল ঘণীভবন, কোন অনুপাতের প্রভাবকের জন্য ইথার করবে আর কোনটা অ্যালকিন তৈরি করবে,আলোক সক্রিয়তা দেখাবে কোন যৌগ ইত্যাদি। প্রশ্নব্যাংক ঘাটাঘাটি করলেই এসব পেয়ে যাবে এবং সব না এই টাইপগুলো বিশেষ করে প্রাকটিস করে যাও। বাকি চ্যাপটারগুলাতে যেসব প্রশ্ন হয় সাধারণ ওই অনুযায়ী প্রাকটিস করো ।

গণিত
ইন্টারে যেই বই পড়েছ সেই বই এবং একটা প্রশ্নব্যাংক দরকার। ম্যাথ প্রশ্ন একটু মাথা খাটিয়ে সহজেই আনসার করা সম্ভব।ঢাবিতে জটিল জটিল ম্যাথ করতে দিবে না তোমার ব্যাসিক যাচাই করার জন্য যেসব ম্যাথ লাগে সেগুলোই দিবে। যেমন তুমি যদি প্রশ্নব্যাংক ঘাটো দেখবে ভেক্টরের জন্য সমান্তরাল ভেক্টর আর কোন শর্তে লম্ব হয় সেটা যাচাই করতে দেয় সবসময় তাহলে বাকি টাইপ ম্যাথগুলা একটু কম প্রয়োজনীয় বুঝতেই পারছো। এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কিভাবে ৩০-৪০ সেকেন্ডে আনসার করা যায় সেটা করাই তোমার কাজ। এরপর সরলরেখা বৃত্ত বলো না কেন কিছু সিলেক্টিভ ম্যাথই দিবে অর্থাৎ টাইপ রিপিট করার সম্ভবনা আছে। ওই ধরণের ম্যাথ করা তোমার দরকার। এরপর ইন্টিগ্রেশনে যদি যাও তাহলে একই জিনিস দেখবে সেটা হলো ক্ষেত্রফল বের করতে দিবে***, না হয় ছোট খাট ইন্টিগ্রেশন করতে দিবে তবে একটু মাথা খাটানো লাগবে।  ডিফারেন্সিয়েশন একই রকমের। বিন্যাস সমাবেশও দেখবে কিছু নিদির্ষ্ট ধরনের প্রশ্ন হয় আর যেহেতু ক্যাললকুলেটর নেই তাই এমন ম্যাথ দিবে না যা হাতে হাতে ক্যালকুলেশন না করতে পারো। ২য় পত্রে স্থিতিবিদ্যা গতিবিদ্যা অনেকের ভয়ের বিষয় তবে ভয় পাবার কারণ নেই এখান থেকে তেমন আহামরি প্রশ্ন হয় না সাধারণ কিছু নিদির্ষ্ট জায়গা থেকে হয়। তবে এখানে সময় নষ্ট করার মত ম্যাথ দেয় যোগাশ্রয়ী প্রোগ্রামিং থেকে কারণ এগুলা সহজ হলেও সময়সাপেক্ষ। তাই এগুলা দেখলে পরে আনসার করার মানসিকতা রাখবে আর অবশ্যই বাসায় প্রচুর প্রাকটিস করবে। জটিলসংখ্যা বাস্তবসংখ্যা প্রশ্ন কিছুটা নিদির্ষ্ট ধরণের হবে এগুলো সহজেই আনসার করতে পারবে।

দ্বিপদী থেকে কোনটি x বর্জিত পদ আর nতম পদ কি এই টাইপের প্রশ্নই আসতে দেখা যায় এবং এগুলার শর্টকাট আছে সেগুলা দেখবে।কনিকে সাধারণত এক স্টেপের অংক দেয় এবং তোমার কাজ হলো শুদ্ধি পরীক্ষা মানে কিছু একটা শর্ত দিবে সে অনুযায়ী যাচাই করে যাবে যে সম্ভব না সেই অপশন বাদ দিয়ে যাবে এবং একই কাজ বৃত্তের জন্য করবে সমীকরণ বের করার কোন দরকার নাই।

প্রশ্নব্যাংক সলভ করলেই কথাটা বুঝবে। ত্রিকোনমিতি ১ম+২য় পত্রের থেকে মূলত সূত্রের উপর ভিত্তি করেই ম্যাথ করতে দেয় তবুও বোর্ডে বেশি বার আসা প্রমাণগুলার আনসার কি সেটা জানা থাকলে পরীক্ষার হলে হয়তো অংক না করেই আনসার করে আসতে পারবে না হলে সূত্রের মারপ্যাঁচের মাধ্যমে নিদিষ্ট উত্তর বের করতে পারবে। সম্ভবনা থেকে মূলত প্রশ্ন আসার সম্ভবনা বেশি সেখান থেকে কথার যে প্যাঁচ দেয় সেগুলা খেয়াল করবা এবং সে অনুযায়ী আনসার করবা।

প্রশ্নব্যাংক ঘাটলেই বুঝতে পারবা। পরিশেষে ম্যাথ মূলত প্রচুর প্রাকটিস এর বিষয় এবং এটা করতেও তোমার ভাল সময় লাগবে তাই টাইম ইফিসিয়েন্সি বাড়ানোর জন্য যতবার পারো প্রশ্নব্যাংক সলভ করার বিকল্প নাই।

ফিজিক্স
এ অংশে সূত্র থেকে ডাইরেক্ট ম্যাথ করতে দেয়। প্রথমত একটা ফিজিক্সের ম্যাথ  দেখলে সাথে সাথে যেন বলতে পারো এটার সূত্র কি এরকম সক্ষমতা থাকা আবশ্যক।এর সাথে গ্রাফিক্যাল বিষয়ে দক্ষতা আবশ্যক।ঢাবির ফিজিক্স প্রশ্ন প্যাটার্ন দেখলে বুঝবা এখানে কিছু নিদির্ষ্ট প্রশ্ন দেওয়া হয় যেমন সেকেন্ড দোলকের দৈর্ঘ্য দ্বিগুণ হলে সময় কতটুকু বাড়বে বা কমবে?-এরকম টাইপ এবং অপশনগুলা কাছাকাছি দিবে তাই সাবধান থাকতে হবে। আবার কিছু জ্ঞানমূলক প্রশ্ন সব সময়ই কমন থাকে যেমন শব্দের ক্ষেত্রে অপবর্তন হয় না এটা বহু বার আসছে। তাই তপন স্যার অথবা ইসহাক স্যার বা যেই বই পড়েছ না কেন সেটা দেখে তারপর প্রশ্নব্যাংক করো এবং সূত্রের ব্যবহার খুব ভালভাবে জানা থাকা লাগবে।

বায়োলজি
২০১৮ সালের বায়োলজি প্রশ্ন একটু কঠিন হলেও ২০১৯ সালেরটা স্ট্যান্ডার্ড ছিল এবং সবই বই থেকে করা হয়েছিল। তোমরা হাসান স্যার আর আজমল স্যারের বই পড়ে ফেলো এবং কোন কোন টপিক থেকে বেশি প্রশ্ন হয় সেটা আইডিয়া নিয়ে সেগুলার উপর জোর দাও। তবে যেটা লক্ষ্যণীয় সেটা হলো ২০১৯ সালের বায়োলজি প্রশ্নটা পুরা বই থেকে করা হয়েছিলো এবং সেখানে টাইপ রিপিট খুব কম বলতে গেলে হয় নাই বললেই চলে। কাজেই এবারও এরকম হতে পারে যেহেতু এখনকার বায়োলজি সিলেবাস আগের সিলেবাসের মত না কাজেই বই পড়াকে আমি উত্তম মনে করি।

তাও প্রশ্নব্যাংক দেখা কিন্তু বিরত রাখবে না কারণ ২০১৯ সালের প্রশ্নে রিপিট না হলেও তোমাদের যে হবে না এটার কিন্তু নিশ্চায়তা দেওয়া যায় না। বিবর্তনের জিনিসপত্র বাদ দিও না অনেক কলেজে এটা পড়ায় না তবে প্রশ্ন দিতেই পারে কারণ সিলেবাসে আছে। আর জিনতত্ত্বে অনুপাতগুলা মনে রাখবে।

১ম অধ্যায়ের বৈশিষ্ট্য কোথা থেকে একস্তরী, দ্বিস্তরী, ত্রিস্তরী, কিংবা সিলোমের ভাগ কোন পর্বে কেমন ইত্যাদি এগুলা লক্ষ্য রাখবে। বাকিগুলা বই থেকে পড়বে আর প্রাণিবিদ্যার লাস্ট অধ্যায়ে মূলত পড়বে কোন প্রাণির আচারণ কিসের উদাহরণ এটা। যেমন মাকড়শার জাল বুনা কিসের উদাহরণ? এই টাইপের জিনিস যদিও এই চ্যাপটারটা বোরিং।

উদ্ভিদবিদ্যা একটু কঠিন সবার কাছেই। কষ্ট করে পড়ার চেষ্টা করো। আর দুই পত্রেই সায়েন্টিফিক নাম কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কারণ ঢাবিতে অপশনে যেসব নাম দিবে তা হয়তো বৈজ্ঞানিক নাম দিয়ে দিতে পারে অথবা সরাসরি নামও চাইতে পারে।

কষ্ট করে লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

লেখক: সিইও, ডিইউ মেনটরস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top