শিশু মানেই তারা বাঁধা মানতে চাইবে না, তারা হবে চঞ্চল ও বাঁধাহীন। তাদের এই চিরাচরিত স্বভাবের সাথে সাথে এ কথাও সত্য যে একটি শিশুকে ছোটবেলায় যা শেখানো হবে, তাই তার সারাজীবনে প্রতিফলন ফেলে যাবে। মনোবিজ্ঞানীরা নানা পরীক্ষায় প্রমাণ পেয়েছে যে শিশুর মন সাদা কাগজের মত, এখানে যা যা লিখে দেয়া হবে, সে তার অনুরূপ করে যাবে। এছাড়াও শিশু অনুকরণপ্রিয়। সে তার পরিবার ও আশেপাশের সমাজের মানুষের দ্বারা সবথেকে বেশি প্রভাবিত হয়ে থাকে।
একজন শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। তাই ছোটবেলা থেকেই এ ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন যে শিশু কিভাবে বড় হচ্ছে ও কি শিখে বড় হচ্ছে। তাই শিশুর মা বাবা কে তার পরিবেশ নিয়ে সচেতন হতে হবে। শিশুর শিক্ষাকালীন সময় শুধুমাত্র তার স্কুলে যাওয়ার প্রথম দিন থেকে শুরু হয় না বরং তার জন্মের প্রথম দিন থেকেই তার শিক্ষা জীবন শুরু হয়। শিশু তার মা বাবাকে যেভাবে কথা বলতে দেখে বা যা করতে দেখে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে থাকে।
অনেক ক্ষেত্রেই মা বাবা ছোটবেলা থেকেই অভিযোগ করে থাকেন যে তাদের শিশু অমনোযোগী। যা নিয়ে তারা বাচ্চার সাথে এতোটা জোর দেখিয়ে থাকে যা তাদের জন্য আরো হিতে বিপরীত নিয়ে আসে। ফলে কখনো কখনো কোনো কোনো বাবা-মা হতাশ হয়ে পড়েন। যেহেতু বাচ্চারা অত্যন্ত নরম হয়ে থাকে সেহেতু তাদের অত্যন্ত সাবধানতার সাথে সামলাতে হবে। হতাশ না হয়ে তাদের সাথে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে। তেমন কিছু কৌশল হতে পারে –
- খেলাচ্ছলে পড়া
শিশুরা খেলতে পছন্দ করবে এটাই স্বাভাবিক। তাই তাদের কে পড়াতে হবে খেলার মধ্য দিয়ে। আপনার শিশুকে লোগো সহ এমন কোনো খেলনা কিনে দিন যা দিয়ে তাকে বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করতে হবে। এছাড়াও বর্তমানে বাজারে খেলনা বোর্ড সহ অনেক ধরনের শিক্ষামূলক খেলনা পাওয়া যায়। আপনার শিশুকে সেগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দিন।
- বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষা
বর্তমান সময়ে শিশুর শিক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে বিনোদনক্ষেত্র। শিশুদের জন্য তৈরী হচ্ছে নানা অনুষ্ঠান ও সিনেমা। টেলিভিশনে রয়েছে শুধুমাত্র শিশুভিত্তিক চ্যানেল ‘দিগন্ত’। আপনার শিশুকে এই সব শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন।
- শিশুকে পর্যাপ্ত সময় দিন
বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুর মা বাবা দুজনই চাকুরীজীবি হয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে অনেকেই শিশুকে যথাযথ সময় দিতে পারেন না। সেক্ষেত্রে শিশুর বিকাশ বাঁধাপ্রাপ্ত হতে পারে।
- উপযুক্ত পরিবেশ প্রদান
আপনি হয়তো টিভি দেখার পাশাপাশি বাচ্চাকে পড়াচ্ছেন বা অন্য কোনো কাজ করছেন। তাই আপনার সন্তান ঘুরেফিরে আপনি যেখানে মনোযোগ দিচ্ছেন সেখানেই মনোযোগ দিচ্ছে। এরকম আরো অসংখ্য বিষয় রয়েছে যা পড়ার উপযুক্ত পরিবেশকে নষ্ট করে। তাই সন্তানের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ প্রদান করুন।
বাচ্চাদের উপর কখনোই কিছু চাপিয়ে দিবেন না। তাকে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে দিন এবং আপনি তার বেড়ে ওঠার সহায়ক হয়ে উঠুন। তবেই আস্তে আস্তে সে একজন পরিপূর্ণ শিক্ষিত মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে পারবে।