লাইট বাল্বের আবিষ্কার

আমরা আজ লাইট বাল্বের আলোয় নিজেদের দৈনন্দিন কাজ গুলো করে থাকি, তুমি কি জানো এর আবিষ্কারক স্বয়ং থমাস আলভা এডিসন ছিলেন| তাঁর দৌলতেই আজ গোটা মানবজাতি বৈদ্যুতিক বাল্বের আলোর আনন্দ নিতে পারছে| আজকের এই জীবনীটা শতাব্দীর সেই সেরা এক বিজ্ঞানীর, যার ইতিবাচক চিন্তাধারা পুরো বিশ্বকে বদলে দিতে পেরেছে| তাড়াতাড়ি হার মেনে নেওয়া আজ বেশিরভাগ মানুষের দুর্বলতার কারণ| এডিসনের মতে সফল হওয়ার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো “আরো একবার চেষ্টা করা এবং অনবরত চেষ্টা করেই যাওয়া”|

থমাস আলভা এডিসনের জন্ম ১১ই ফেব্রুয়ারী, ১৮৪৭ সালে আমেরিকার ওহিওর, মিলান নামক স্থানে| তাঁর বাবার নাম ছিলো স্যামুয়েল ওগডেন এডিসন এবং মায়ের নাম ছিলো ন্যান্সি ম্যাথিউস এলিয়ট| স্যামুয়েল এডিসন পেশায়, একজন সৈনিক ছিলেন| তিনি ১৮১২ সালে, আমেরিকা এবং ইউনাইটেড কিংডমের মধ্যে হওয়া পারস্পরিক যুদ্ধে লড়েছিলেন তিনি সেই যুদ্ধে আমারিকার মিডলসেক্স রেজিমেন্টের একজন অধিনায়কও ছিলেন|  আর অন্যদিকে মা ন্যান্সি ছিলেন সাধারণ একজন গৃহবধূ।

এডিসন তাঁর স্কুলের শিক্ষকদের খুব প্রশ্ন করতো পড়ানোর সময়| শিক্ষকেরা ভীষন বিরক্ত হতেন এবং তারা ভাবতেন যে, সে ইচ্ছা করেই তাদের বিরক্ত করার জন্য এইসব করছে| তাঁর প্রশ্নগুলো ঠিক এইরকমের ছিলো- “যদি পাখিরা আকাশে উড়তে পারে তাহলে মানুষ কেন পারেনা?”| তাঁর মনে যেই ধরনেরই প্রশ্ন আসতো না কেন, তিনি সেটার উত্তর বার করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠতেন| তাঁর এই জিজ্ঞাসু মনোভাব, তাঁর চরিত্রকে পাগল হিসাবে রুপান্তরিত করে দেয় মানুষের কাছে|

তিনি নিজের বাড়িতে একটা গবেষণাগার তৈরী করে ফেলেন| তিনি সারাদিন অনেক পরিশ্রম করার পরও নিজের জন্য সময় ঠিকই বার করে নিতেন| সেই ফাঁকা সময় তিনি বিভিন্ন বই পড়তেন আর নাহলে নিজের গবেষণাগারে গিয়ে বিভিন্ন জিনিসের আবিষ্কারে ব্যস্ত রাখতেন নিজেকে|

লাইট বাল্বের আবিষ্কার:

থমাস আলভা এডিসন তাঁর জীবনকালে প্রচুর আবিষ্কার করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু যেই আবিষ্কারের জন্য তিনি আজ বিশ্বজুড়ে এত জনপ্রিয়, সেটা হলো তাঁর  লাইট বাল্বের আবিষ্কার |

তখনকার দিনের মানুষ, রাতের বেলায় ভালো করে কাজ করতে পারতো না পর্যাপ্ত আলোর অভাবে| যদিও মোমবাতির আলোর ব্যবহার মানুষ করতো ঠিকই,   কিন্তু তার আলো বেশি জোরালো ছিলোনা| এডিসন এবার আলোর সমস্যাকে দূর করার জন্য বিভিন্ন রকমের প্রয়োগ করতে থাকেন তাঁর প্রয়োগশালায়|

তিনি বাল্বের ফিলামেন্টকে তৈরী করার জন্য প্রথমে কার্বনের ব্যবহার করেন, সেটায় অসফল হওয়ার পর তিনি এরপর প্লাটিনাম, লোহা ও অন্যান্য ধাতুর প্রয়োগ করতে থাকেন কিন্তু অনেক কিছু ব্যবহার করার পরেও তিনি সফল কিছুতেই হচ্ছিলেন না| লাইট বাল্ব তৈরী করতে তাকে প্রায় ৯৯৯৯ বার ব্যর্থ হতে হয়েছিল| এতবার ব্যর্থ হওয়ার পরও তিনি কোনদিন হার মানেননি| সর্বদা আরো নতুন উদ্যমে আর আগের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি পুণরায় লেগে পরতেন বাল্ব তৈরির কাজে| অবশেষে ১০০০০ বারের চেষ্টায়, তিনি অবশেষে সফল হন বিশ্বের প্রথম লাইট বাল্ব তৈরীর ক্ষেত্রে| ২২শে অক্টোবার, ১৮৭৯ সালে তিনি সর্বসমক্ষে, নিজের লাইট বাল্বের সফল পরীক্ষা করেন| সেই লাইট বাল্ব প্রায় ১৩.৫ ঘন্টা ধরে জ্বলেছিল|

এরপর তিনি বাল্বের আলোর সময়সীমাকে বাড়ানোর জন্য আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন| অবশেষে ৪ই নভেম্বর, ১৮৭৯ সালে উন্নতমানের কার্বন ফিলামেন্ট দিয়ে তৈরী বাল্ব, সকলের ব্যবহারের জন্য বাজারে বিক্রি করা হয়|

এত বড় একটা সাফল্যের পর, যখন থমাস এডিসনকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়, তখন   সাক্ষাৎকারকারী তাঁকে প্রশ্ন করেন – আপনি কি করে এতবার ব্যর্থ হওয়ার পরও হার না মেনে নিজের কাজ চালিয়েছিলেন?

তখন এই প্রশ্নের উত্তরে এডিসন সেই ব্যক্তিকে জবাব দেন- আমি ৯৯৯৯ বার অসফল হয়নি, আমি এতবার এমন সব পথ বার করেছিলাম সেটা আবিষ্কার করার, যেগুলি কোনো কাজেই আসেনি” |

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top