নিঃসঙ্গতারও উপকারিতা রয়েছে

বহুকাল পূর্বে একজন গ্রীক মহাজ্ঞানীকে কেউ একজন জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “কোন জিনিসটি আপনার কাছে সব চাইতে কঠিন বলে মনে হয়? “তিনি উত্তরে বলেছিলেন, “নিজেকে জানা” সত্যিই তাই। দেখুন তো একবার চিন্তা করে, আপনি যাকে আপন ভাবেন বা ভালবাসেন, তার কত কিছুই না আপনি জানেন। সে কি পছন্দ করে, অপছন্দ করে, তার প্রিয় রঙ, প্রিয় খাবার, প্রিয় জায়গা আরও কত কি! অথচ আপনি নিজেকে কতটুকু জানেন?

আপনাকে হয়তো কেউ একথা জিজ্ঞেস করলে বলেই বসতে পারেন, “আমি নিজেকে চিনবো না তো কে চিনবে?” নিজেই একবার ভেবে দেখুন তো নিজেকে জানার জন্য আপনি কতটুকু সময় দিচ্ছেন বা এমন কি করেছেন?

ভাবছেন, এতক্ষণ যা লিখা হল তার সাথে লিখাটির নামের সাথে কি সম্পর্ক থাকতে পারের প্রশ্নটি সত্যিই আসতে পারে। কারণ নিজেকে চেনা বা জানা আর নিঃসঙ্গতা কি এক জিনিস? না, এক জিনিস নয় এবং তা আমরা কখনো বলতেও চাই না। কিন্তু দুটোর মধ্যে একটি সূত্র কিন্তু অবশ্যই আছে। সেটি কিভাবে? বলছি।

সাধারণত আমরা নিঃসঙ্গতা তাকেই বলি যে কারও সাথে মিশে না বা মিশতে পারে না। অথবা যার বন্ধু কম। অথবা যে নিজেকে নিয়ে থাকতেই বেশি পছন্দ করে। আর আমরা সবসময়ই এই নিঃসঙ্গতা মানুষের একটি নেতিবাচক দিক হিসেবে চিহ্নিত করে থাকি। কিন্তু এই নিঃসঙ্গতা বা একাকীত্ব সবসময় যে খারাপই হবে তা কিন্তু নয়। মানুষ যখন নিঃসঙ্গ থাকে, তখন সে সবটুকু সময় নিজেকে দিতে পারে। নিজেকে নিয়ে ভাবার

সময় পায়। ঘা কোনো ব্যস্ত মানুষ করতে পারে না। আর এটিই হল নিঃসঙ্গতার সবচেয়ে বড় সুবিধা। তাহলে এবার মিললো তো, নিজেকে জানা বা চেনার সাথে নিঃস্বঙ্গতার মিলটি কোথায়?

আসুন এবার নিঃসঙ্গতার বা একাকীত্বের আরও কিছু উপকারিতা সম্পর্কে ধারণা নেয়া যাক।

১। নিঃসঙ্গতা আপনার মস্তিষ্ককে পুনরায় সচল করতে সহায়তা করে

যারা সবসময় অনেক ব্যস্ত থাকে তাদের ক্ষেত্রে মানসিক চাপও অনেক বেশি থাকে। এর কারণ হচ্ছে তিনি তার মনটিকে সচল করার সুযোগ দিচ্ছেন না। আর তাই মনকে হালকা করতে নিজের জন্য কিছুটা সময় আলাদা করে রাখতেই হবে। অল্প কিছু সময়ের জন্য নিজেকে সবকিছু থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন। এই সময়টা শুধুই নিজের জন্য ব্যয় করুন। দেখবেন এর ফলে পরবর্তী কাজটা বেশ ফুরফুরে মেজাজে শুরু করতে পারছেন।

২। নিঃসঙ্গতা আপনার মনোযোগ এবং কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে

কিছুটা সময় একা থাকলে চারপাশের বিসৃঙ্খলা থেকে মুক্ত থাকা যায়।যত শান্ত পরিবেশে আপনি কাজ করবেন, ঠিক ততটাই সেই কাজে আপনি আরও বেশি মনোযোগী হতে পারবেন। আর যে কাজে আপনি বেশি মনোযোগী হবেন, সে কাজের ফলও তত বেশি হবে এবং সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।

৩। নিজেকে খুঁজে পেতে সাহায্য করে

আপনি যখন অনেকের মধ্যে কাজ করেন, তখন সেই অনেকের সাথে তাল মিলিয়ে আপনাকেও চলতে হয়। সেখানে আপনার সিদ্ধান্তগুলো বা কাজগুলো হয়তো অন্যদের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে। তাই নিজেকে আলাদা করে কিছু সময় দিলে নিজের সিদ্ধান্ত গুলো নিয়ে ভাবা যায়। নিজের ভাল এবং মন্দের দিকগুলো সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়।

৪। কিছু নিয়ে গভীর চিন্তা করার সুযোগ করে দেয় নিঃসঙ্গতা

প্রতিদিনকার দায়িত্ব এবং কর্তব্যগুলো পালন করতে করতে মানুষ একসময় নিজেকেই হারিয়ে ফেলে। আর তখন নিজের বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা কর হয়ে ওঠে না।তাই নিজেকে নিয়ে গভীরভাবে ভাবার জন্য কিছুটা সময় নিন।এতে আপনার কর্মদক্ষতা বাড়বে।

৫। সমস্যাবলীর সমাধান বের করতে একা একা চিন্তা করার জুড়ি নেই

যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে শান্ত হয়ে তার সমাধানের কথা ভাবতে হয়। তা না হলে সঠিক সমাধান টি খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হয়। আর শান্ত হতে গেলে আপনাকে সব রকম বিশৃঙ্খলা থেকে দূরে সরে আসতেই হবে।

৬। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে একাকীত্বের প্রয়োজন

একা একা থাকলে নিজেকে সময় দেয়া যায়, নিজেকে জানা যায়। আপনি জীবনে কি চাচ্ছেন, কাদের নিয়ে থাকতে চাচ্ছেন এগুলো নিয়ে চিন্তা করা যায়। আর এতে করে অন্যের প্রতি কিভাবে আচরণ করলে তা আপনাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হবে তাও ভালভাবে বিশ্লেষণ করা ঘায়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, নিঃস্বঙ্গতা আমরা সকলেই ভয় পেলেও এরও অনেক ইতিবাচক দিক আছে। তবে অবশ্যই একে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। নিজেকে যেমন আলাদা করে কিছুটা সময় দিতেও হয়, তেমনি অন্যদেরও কিছু সময় দিতে হয়। এই দুইয়ের মধ্যে যখন ভারসাম্যথাকবে তখনই আপনি একজন সফল মানুষে পরিণত হতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top