কোভিড-১৯ কালে শ্রেণিকক্ষে সতকর্তা

স্কুলগুলো পুনরায় খোলার সাথে সাথে কোভিড-১৯-এর বিস্তার রোধে শ্রেণিকক্ষের ভিতরে এবং বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। নিম্নোক্ত বিষয়ে তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে শিক্ষকদের সহায়তা করাই এই নিবন্ধটির উদ্দেশ্য:


মহামারী চলাকালীন সময়ে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে শিক্ষকরা যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সেটিই শিক্ষার মূল বিষয়। স্কুলগুলো পুনরায় খোলার সাথে সাথে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে শিশুরা যাতে তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সক্ষম হয় এবং ভুলে যাওয়া জ্ঞান এবং দক্ষতাজনিত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে – এমনটি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।

একজন শিক্ষক হিসাবে, তথ্য জানার ফলে কেবল নিজেদের নয়, শিক্ষার্থীদেরও সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে। সমাজে ভয়ভীতি ছড়িয়ে দেয় এবং গুজব ছড়িয়ে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত এমন ভূয়া তথ্য এবং বিপজ্জনক কল্পকাহিনী সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।

আপনার কিছু শিক্ষার্থী এমন পরিবার থেকে স্কুলে ফিরে আসতে পারে যেখানে তারা কোভিড-১৯ সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য শুনেছে। তাদেরকে সঠিক তথ্য জানাতে হবে।

কোভিড-১৯ ভাইরাসটিকে বোঝা, এটি কীভাবে ছড়ায় এবং ভাইরাসটি থেকে কীভাবে আমরা নিজেকে এবং অন্যকে রক্ষা করতে পারি – সে সম্পর্কে শ্রেণিকক্ষের পদ্ধতি এবং প্রোটোকল তৈরির ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ। বিধিগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করার জন্য ভাইরাসটি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জানা দরকার। শিশুদের উদ্বেগের কোন বিষয় ও এ সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা থাকলে সেগুলো শুনুন এবং বয়সের সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করে তাদের প্রশ্নের উত্তর দিন। তাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে এমন বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করুন এবং একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এগুলো যে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া সে সম্পর্কে তাদেরকে আশ্বাস দিন।

কোভিড-১৯ সম্পর্কিত তথ্যের ক্ষেত্রে ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আপনার দেশের স্থাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতো নির্ভরযোগ্য সূত্রের ব্যবহার নিশ্চিত করুন। পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত থেকে ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ অনুসরণ করে আমরা নিজেরদেরকে এবং আমাদের চারপাশের মানুষজনকে রক্ষা করতে পারি।

স্কুলে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা উঠলেই, আপনার স্কুল প্রশাসন কর্তৃক প্রস্তুতকৃত পদ্ধতি এবং আপনার দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় এবং/অথবা স্থানীয় স্বাস্থ্য সংস্থা ও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তৈরিকৃত প্রোটোকল অনুসারে শ্রেণিকক্ষের জন্য কিছু বিধি প্রস্তুত করা জরুরী।

সুপারিশকৃত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • স্কুলে উপস্থিত প্রত্যেকের মধ্যে কমপক্ষে এক মিটার বা ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা
  • প্রতিটি ডেস্কের মধ্যে ব্যবধান বাড়ানো (প্রতিটি ডেস্কের মধ্যে কমপক্ষে ১ মিটার বা ৩ ফুট), হঠাৎ করে ছুটি/বিরতি ও দুপুরের খাবারের বিরতি দেওয়া (এটি করা সম্ভব না হলে, একটি বিকল্প হলো ডেস্কে বসে দুপুরের খাবার খাওয়া)
  • স্কুল এবং স্কুল-পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেলামেশা সীমিত করা। যেমন, একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সারাদিন একটিমাত্র ক্লাসরুমে থাকবে, এবং শিক্ষকরা বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে যাতায়াত করবেন; অথবা, সম্ভব হলে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশের জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্রবেশপথ ব্যবহার করা, অথবা প্রতিটি শ্রেণির জন্য বিল্ডিং/শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ এবং বের হয়ে যাওয়ার একটি পদ্ধতি চালু করা
  • স্কুল শুরু এবং বন্ধের সময়ের মধ্যে ভিন্নতা আনতে এবং স্কুলের সকল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের একসাথে থাকা এড়াতে স্কুলের দিনগুলোকে আলাদা করা
  • প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে যাতে কম সংখ্যক শিক্ষার্থী প্রবেশের অনুমতি পায় (যদি জায়গা থাকে) সেজন্য সম্ভব হলে শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করা।
  • স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া বা ডে কেয়ারের সময় জনসমাগম না করার পরামর্শ দেওয়া, এবং সম্ভব হলে, স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে পরিবার বা সম্প্রদায়ের বয়স্ক সদস্যদের পরিহার করা। একটি নির্দিষ্ট সময়ে শিশুদের বড় ধরনের জমায়েত কমাতে স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া/শিক্ষার্থীদের স্কুলে রেখে যাওয়ার সময়গুলোকে আলাদাভাবে বিন্যস্ত করা (বয়সভিত্তিক)
  • প্রবেশ পথের চারপাশে ১ (এক) মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে বিভিন্ন চিহ্ন, মাটিতে দাগানো, টেপ, দড়ি এবং অন্যান্য উপায় ব্যবহার করা
  • শারীরিক শিক্ষা এবং খেলাধুলার পাঠ কীভাবে পরিচালনা করা হবে সে বিষয়ে আলোচনা করা
  • যতটা সম্ভব পাঠগুলোকে শ্রেণীকক্ষের বাইরে সরিয়ে নেওয়া বা কক্ষগুলোতে বায়ুচলাচল নিশ্চিত করা
  • স্কুল প্রাঙ্গন ছাড়ার পরে শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের জমায়েত না করতে এবং সামাজিকীকরণ না করতে উৎসাহিত করা।

করনীয়

বিধিগুলো কঠোরভাবে মেনে চলতে আপনার শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা, এবং করণীয় এবং বর্জ্যনীয় বিষয়গুলোর তালিকা তৈরি করতে এসব বিধিগুলো সহায়ক হতে পারে। শিক্ষার্থীরা একে অপরকে কীভাবে স্বাগত জানাবে, ডেস্কগুলোকে কীভাবে সাজানো হবে, এবং দুপুরের খাবারের বিরতিতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার পদ্ধতি (তারা কাদের সাথে বসে থাকবে, বিরতিতে কাদের সাথে খেলবে, সপ্তাহব্যাপী কীভাবে তারা তাদের সকল বন্ধুদের সাথে সময় নির্ধারণ করবে) সে সম্পর্কে তাদের চারপাশে একটি তালিকা তৈরি করে রাখা।

স্বাস্থ্য এবং হাত ধোয়া সম্পর্কিত স্বাস্থ্যবিধি

কোভিড-১৯ থেকে নিজেকে এবং অন্যদের রক্ষা করতে শিক্ষার্থীদের কী কী সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত তা নিশ্চিত করতে শিক্ষকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শ্রেণিকক্ষে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় উদাহরণ দেওয়া জরুরি।

জীবাণু ছড়ানোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অত্যন্ত সহজ, ব্যয় সাশ্রয়ী এবং কার্যকর উপায় হলো হাত ধোয়া। এটি শিক্ষার্থী এবং শিক্ষা কর্মীদের সুস্থ রাখে। 
 

হাত ধোয়ার পাঁচটি ধাপ সম্পর্কে পড়ান

১.   নিরাপদ ও প্রবাহমান পানিতে হাত ভেজানো

২.   ভেজা হাতে পর্যাপ্ত সাবান লাগানো

৩.   অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাতের সকল অংশ যেমন, হাতের নিচের অংশ, আঙ্গুলের মধ্যে ও নখের নীচে ভালোভাবে ঘষে নেওয়া। হাত ধোয়ার সময়টুকুকে একটি মজাদার অভ্যাসে পরিণত করতে আপনি শিক্ষার্থীদের দ্রুত একটি গান গাইতে উৎসাহিত করতে পারেন

৪.   প্রবাহমান পানিতে ভালভাবে হাত ধুয়ে ফেলা

৫.   একটি পরিষ্কার কাপড় বা এককভাবে ব্যবহার্য্য তোয়ালে দিয়ে ভালোভাবে হাত শুকিয়ে নেওয়া।

স্কুলে পানির পাত্র, প্রবাহমান পানি অথবা সাবানের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকলে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল রয়েছে এমন একটি হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।

আপনি কি জানতেন? যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি সাবান ব্যবহার করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত ঠান্ডা পানি এবং গরম পানি উভয়ই জীবানু ধ্বংসে সমানভাবে কার্যকর!

>পড়ুন: করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) থেকে সুরক্ষায় হাত ধোয়া সম্পর্কে যেসব বিষয় জানতে হবে

প্রয়োজনের সময়ে যেমন, শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ ও বের হওয়া, মেঝে, শিক্ষণ উপকরণ ও বইপত্র স্পর্শ করা এবং নাকের সর্দি মোছার জন্য টিস্যু ব্যবহার করার পরে নিয়মিত হাত ধোয়া এবং/অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তুলতে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করুন।

শিক্ষার্থীদের উচিত কাশি এবং/অথবা হাঁচি সব সময় তাদের কনুইতে দেওয়ার অভ্যাস করান। তবে, দুর্ঘটনাক্রমে কাশি এবং/অথবা হাঁচি যদি তারা তাদের হাতের উপর করে থাকে, সেক্ষেত্রে অবিলম্বে তাদের হাত ধোয়া বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করার নির্দেশ দিন।

শিক্ষার্থীরা যদি কোনও টিস্যুতে হাঁচি বা কাশি দেয়, সেক্ষেত্রে অবিলম্বে এটিকে যথাস্থানে ফেলে দেওয়া এবং তাদের হাত ধোয়া নিশ্চিত করুন। ঘন ঘন এবং নিয়মিত হাত ধোয়ার ধারণাটি স্বাভাবিক করে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এমনকি হাত পরিষ্কার থাকলেও চোখ, নাক এবং মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করুন। এসব জায়গা থেকে জীবাণুগুলো তাদের পরিষ্কার হাতে স্থানান্তর হতে পারে এবং এইভাবে শ্রেণিকক্ষে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ঘন ঘন হাত ধোয়া ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা জোরদার করুন এবং প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করুন। সাবান এবং পানিসহ হাত ধোয়ার জায়গাগুলো প্রস্তুত করুন এবং এগুলো ঠিকঠাক রাখুন। এছাড়াও, সম্ভব হলে, প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে, প্রবেশ পথে ও বের হওয়ার পথে এবং খাবার কক্ষ ও টয়লেটের কাছে অ্যালকোহল সমৃদ্ধ হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখুন।

করনীয়

আপনার শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যকর অনুশীলনগুলো দেখাতে আপনি যে সকল ব্যবহারিক পদক্ষেপ/কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারেন সেগুলো চিহ্নিত করুন। উদাহরণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • আপনার শিক্ষার্থীদের সাথে গাওয়ার জন্য হাতের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত একটি গান তৈরি করুন
  • শ্রেণিকক্ষের জন্য শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যকর পোস্টার আঁকতে দিন
  • হাতের স্বাস্থ্যবিধিকে একটি প্রাত্যহিক অভ্যাসে পরিণত করুন
  • প্রত্যেকের জন্য হাত ধোয়া/হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে মধ্যাহ্ন বিরতির আগে/পরে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় আপনি নির্বাচন করতে পারেন
  • হাত ধোয়া এবং স্যানিটাইজার প্রয়োগ কীভাবে করতে হয় তা শারীরিকভাবে প্রদর্শন করুন
  • হাত ধোয়ার জন্য আপনার শ্রেণিকক্ষে পয়েন্ট বা নম্বর দেওয়ার ব্যবস্থা রাখুন। এছাড়াও, প্রতিবার হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজার ব্যবহার করার জন্য শিক্ষার্থীদের পয়েন্ট দিন
  • হাতের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের একটি জনসেবামূলক ঘোষণা তৈরি করতে বলুন এবং এই পোস্টারগুলো/ঘোষণাগুলো প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ বা বিদ্যালয়ের দৃশ্যমান স্থানে রাখুন


স্কুলে মাস্ক পরা

আপনার স্কুলে যদি ফ্যাব্রিক মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়, তাহলে কখন মাস্ক পরা উচিত এবং স্কুলের বিধিগুলো যেমন, শ্রেণিকক্ষ এবং খেলার মাঠে দূষিত মাস্ক ব্যবহারের ঝুঁকি এড়াতে ব্যবহৃত মাস্কগুলো কীভাবে নিরাপদে ফেলে দিতে হয় সেটা শিক্ষার্থীরা যেন জানে সে বিষয়টি আপনি নিশ্চিত করুন।

মাস্ক সঠিকভাবে কীভাবে ব্যবহার এবং সংরক্ষন করতে হয় আপনার শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে সে বিষয়গুলো অনুসন্ধান করুন।

মাস্কের ব্যবহার যাতে শিক্ষণ কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি না করে তা নিশ্চিত করার সকল পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। মাস্ক পরার কারনে বা সীমিত সম্পদ বা না পাবার কারণে মাস্কের অভাবে কোনও শিশুকে পড়াশোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়।

বাক প্রতিবন্ধী বা শ্রবণ প্রতিবন্ধী কোন শিক্ষার্থী যদি আপনার শ্রেণিতে থাকে তাহলে, মাস্ক পরার ফলে তার কথার অনুন্নত সংকেত, ঠোঁট দিয়ে পড়া ও বক্তার অভিব্যক্তি বন্ধ হওয়া এবং শারীরিক দূরত্বের কারনে এই শিশুরা শেখার সুযোগ থেকে কীভাবে বঞ্চিত হতে পারে তা বিবেচনা করুন। ঠোঁট দিয়ে পড়ার বিষয়টিকে (যেমন, মাস্ক ছাড়াই) মেনে নিতে অভিযোজিত মাস্ক অথবা মুখের শিল্ড ব্যবহারকে ফ্যাব্রিক মাস্কের বিকল্প হিসাবে ভাবা যেতে পারে।

পরিষ্কার-পরিছন্নতা এবং জীবাণু ধ্বংস করা

আপনার শ্রেণিকক্ষের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা কীভাবে রক্ষা করা যায় সে সম্পর্কিত তথ্য।

ডেস্ক, দরজার হাতল, কম্পিউটারের কীবোর্ড, হাত দিয়ে শেখা যায় এমন উপকরণ, ট্যাব, ফোন এবং খেলনার মতো প্রায়শই স্পর্শ করা হয় এমন জিনিষপত্র এবং জায়গা প্রতিদিন পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করুন।

কোন জিনিষপত্র বা জায়গায় ময়লা দেখামাত্রই পরিষ্কার করা। জিনিষপত্র বা জায়গাগুলোতে যদি শরীরের তরল পদার্থ বা রক্ত লেগে থাকে, সেক্ষেত্রে তরলটির সংস্পর্শ এড়াতে গ্লাভস পরা এবং অন্যান্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। স্পিলটি সরিয়ে ফেলুন এবং তারপরে জায়গাটি পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করুন।
 

পরিষ্কার-পরিছন্ন উপকরণ ব্যবহার বিষয়ে কর্মীদের জন্য টিপস

  • নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনি সকল নির্দেশনার লেবেল এবং এদের নিরাপদ এবং উপযুক্ত ব্যবহার বুঝতে পেরেছেন
  • লেবেলের নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন
  • পণ্য ও জীবাণুনাশক মাঝে মাঝে পরিষ্কার করুন এবং গ্লাভস্ ব্যবহার ও চোখের সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিতে বলুন। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, ব্লিচ সলিউশন নিয়ে কাজ করার সময় আপনার হাতের সুরক্ষার জন্য সব সময় গ্লাভস পরা উচিত
  • লেবেলগুলোতে এগুলোর ব্যবহার নিরাপদ এমন নির্দেশনা দেওয়া না থাকলে পরিষ্কার পরিছন্নতার পণ্য এবং জীবাণুনাশক মেশাবেন না
  • নির্দিষ্ট পণ্যের সংমিশ্রণের ফলে (যেমন ক্লোরিন ব্লিচ এবং অ্যামোনিয়া ক্লিনার্স) গুরুতর আঘাত বা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে
  • মেঝেতে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত হলে পাতলা ঘরোয়া ব্লিচ সলিউশন ব্যবহার করা যেতে পারে
  • আপনার ব্লিচটি জীবাণুমুক্ত করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে এবং এতে ০.৫ শতাংশ সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট আছে কিনা তা দেখতে লেবেলটি পরীক্ষা করে দেখুন। পণ্যটি যে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়নি তা নিশ্চিত করুন
  • কাপড় রঙ করা বা সাদা করার জন্য তৈরি করা হয়েছে এমন কিছু কিছু ব্লিচ জীবাণুমুক্ত করার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে
  • সঠিকভাবে মেশানো হলে ঘরোয়া ব্লিচ করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর হবে
  • ব্যবহার এবং সঠিক বায়ুচলাচলের জন্য প্রস্তুতকারকের নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন। অ্যামোনিয়া বা অন্য কোনও পরিষ্কার পরিছন্নতা পণ্যের সাথে ঘরোয়া ব্লিচ কখনও মেশাবেন না
  • কমপক্ষে ১ (এক) মিনিটের জন্য মেঝের উপর সলিউশন ঢেলে দিন

করনীয়

  • আপনার স্কুল/শ্রেণিকক্ষে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এবং বহুল স্পর্শের জায়গা এড়াতে আপনার শিক্ষার্থীদের সাথে কিছু মজাদার ও সৃজনশীল ধারণা এবং বিধি নিয়ে আলোচনা করুন। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, সিঁড়ি দিয়ে উপরে এবং নিচে উঠানামার সময় রেলিং স্পর্শ না করা বা দরজার হাতলের স্পর্শ এড়াতে শ্রেণিকক্ষের দরজা খোলা রাখা
  • দল হিসাবে একসাথে কিছু বিধি নিয়ে আলোচনা করুন। এগুলো একটি ফ্লিপচার্টে লিখুন এবং পরবর্তীতে এটি আপনি শ্রেণিকক্ষে ঝুলিয়ে রাখতে পারেন
  • মজাদার স্মারক/পোস্টার তৈরি করে করিডোরে ঝুলিয়ে রাখতে পারেন যা স্যানিটেশন বিধিগুলো মেনে চলার বিষয়টি অন্যদের মনে করিয়ে দেবে।

কোনও শিক্ষার্থী অসুস্থ বোধ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া

কোভিড -১৯ উপসর্গ সনাক্তকরণ

কোভিড-১৯ এর সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলো হলো জ্বর, কাশি এবং ক্লান্ত বোধ করা। অন্যান্য লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, বুকের ব্যথা বা চাপ, পেশীতে বা শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, স্বাদ বা গন্ধ না পাওয়া, বিভ্রান্তি, গলা ব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া, ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা এবং ত্বকে ফুসকুড়ি।

স্কুলের প্রস্তুতি এবং আপনার শিক্ষার্থীদের মধ্যে যদি নিচের কোনও লক্ষণ দেখা যায় তবে কী করতে হবে

  • অপেক্ষা করার কক্ষ হিসাবে বিদ্যালয়ের একটি নির্দিষ্ট জায়গা নির্ধারণ করুন (অর্থাৎ স্কুলে প্রবেশের নিকটবর্তী কোনও জায়গা) যেখানে শিশুরা অপেক্ষা করতে পারে। আদর্শগতভাবে, এই কক্ষটিতে বায়ুচলাচল স্বাভাবিক থাকা উচিত। স্কুলে যদি পর্যাপ্ত নার্স থাকে তবে অপেক্ষা করার কক্ষের কর্মী হিসাবে তাদের নিযুক্ত করা উচিত। শিক্ষার্থীরা যদি অসুস্থ বোধ করে এবং/বা তাদের যদি কোভিড-১৯ এর কোনও লক্ষণ দেখা যায়, সেক্ষেত্রে তাদের বাবা-মা বা যত্মকারীরা শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে নিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের এই কক্ষে রাখা উচিত। এর পরে, কক্ষটি পরিষ্কার, জীবাণুমুক্ত এবং স্যানিটাইজ করা উচিত।
  • যদি পর্যাপ্ত মাস্ক থাকে তবে অসুস্থ শিক্ষার্থীকে একটি মেডিকেল মাস্ক দিন
  • অসুস্থ ব্যক্তিদের সনাক্ত করতে শরীরের তাপমাত্রা এবং জ্বর বা গত ২৪ ঘন্টায় জ্বরের অনুভূতি সম্পর্কে জানার জন্য সকল কর্মী, শিক্ষার্থী এবং দর্শনার্থীদের ভবনে প্রবেশের সময় প্রতিদিন স্ক্রিনিংয়ের বিষয়টি বিবেচনা করুন
  • সামাজিক কলঙ্ক তৈরি না করে যারা ভাল আছে তাদের থেকে অসুস্থ শিক্ষার্থী এবং কর্মীদের আলাদা করার এবং বাবা-মাকে জানানো ও যেখানে সম্ভব স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী/স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ করার পদ্ধতি তৈরি করুন
  • পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে শিক্ষার্থী/কর্মীদের সরাসরি কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা বাড়িতে পাঠানোর প্রয়োজন হতে পারে
  • যদি অসুস্থ বোধ করে তবে সকল শিক্ষার্থীকে বাড়িতে থাকতে এবং নিজেদের আলাদা রাখতে উৎসাহ দিন
  • তাপমাত্রা স্ক্রিনিংয়ের প্রয়োজন হলে, কার্যক্রমটি পরিচালনার জন্য একটা পদ্ধতি প্রস্তুত করুন
  • বাবা-মা এবং শিক্ষার্থীদের সাথে পদ্ধতিগুলো নিয়ে যথাসময়ে আলোচনা করুন

শিশুরা কোভিড-১৯ এর সাথে সম্পর্কিত শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত সমস্যায় ভূগছে – এমনটি বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। আপনি যদি আপনার শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনও ফুসকুড়ি, উচ্চ রক্তচাপ বা তীব্র গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা লক্ষ্য করেন, তবে এটি একটি ইঙ্গিত করে যে তারা মাল্টিসিস্টেম শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত সিন্ড্রোম অনুভব করছে এবং অবিলম্বে তাদের চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া উচিত।

করনীয়

আপনার নিজের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা তৈরি করুন। স্কুল চলার দিনে যদি কোনও শিক্ষার্থী অসুস্থ বোধ করে তবে আপনি কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন? তারা আপনাকে বলার সাথে সাথে আপনি নিতে পারেন এমন সব সম্ভাব্য পদক্ষেপ বিবেচনায় রাখুন।

Collected: Unicef.org

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top