বিদ্যালয়জীবনে শিক্ষার্থীদের ভুল ধারণাগুলো কী কী

১. আমাকে ভালো স্কুলে পড়তে হবে

বিশেষ করে অভিভাবকদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। প্রত্যেক মা–বাবা চান তাঁর সন্তান যেন ভালো স্কুলে পড়ার সুযোগ পান। তাই অল্প বয়সে শিক্ষার্থীদের নামতে হয় বিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধে। ভালো বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে অনেক শিক্ষার্থী ছোটবেলায় হতাশ হয়ে পড়ে। অনুশোচনা করতে থাকে, যা পরবর্তী সময়ে পড়াশোনার ওপর প্রভাব ফেলে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবক উভয়কেই বিষয়টি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কোনো বিদ্যালয় আসলে খারাপ নয়। কোনোটাতে সুযোগ–সুবিধা বেশি আর কোনোটাতে কম। এটাই পার্থক্য শুধু।

২. বিদ্যালয়ের ক্লাস না করলেও চলবে

অনেক শিক্ষার্থী মনে করে বিদ্যালয় ক্লাস না করলেও চলবে। অনেকে আবার দাবি করেন বিদ্যালয় ক্লাসগুলো মানসম্মত নয়। তাই শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টারের প্রতি ধাবিত হচ্ছে। দিনের অনেকটা সময় তারা ব্যয় করছে কোচিং সেন্টারগুলোতে। এ জন্য তারা বিদ্যালয় অনেক সময় অনুপস্থিত থাকছে। এটা আসলে ভুল ধারণা। বিদ্যালয়ের বেশির ভাগ ক্লাস মানসম্মত। শিক্ষকেরা যথেষ্ট আগ্রহ নিয়ে সেখানে পড়ান। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণে ব্যর্থ হওয়ার জন্যই হয়তো কোচিং সেন্টার বা প্রাইভেটগুলো তাদের কার্যক্রম চালাতে সক্ষম হচ্ছে।

৩. একাডেমিক বইয়ের চেয়ে গাইড বই বেশি ভালো

এটা অন্যতম একটি ভুল। বোর্ডের একাডেমিক বইগুলো হলো মূল। আর এই বইগুলো যাতে সহজে বুঝতে পারা যায়, সে জন্য তৈরি করা হয় বিভিন্ন গাইড বা সহায়ক বই। শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করা হয় বিভিন্ন নোট বা গাইড বইয়ের ওপর। এটা আসলে একধরনের ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য। মূল বই বুঝতে পারলে এবং নিয়মিত চর্চা করলে কোনো সহায়ক বইয়ের দরকার হবে না। প্রয়োজনে নিজের মতো করে নোট তৈরি করা যেতে পারে। কোনো টপিক না বুঝলে তা সমাধানে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাহায্য নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যালয় শিক্ষকদের আরও বেশি আন্তরিক হতে হবে।

৪. আমার কোনো সহপাঠীর প্রয়োজন হয় না

বিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষার্থী একত্রে পড়াশোনা করে, যাদের আমরা সহপাঠী বলে থাকি। তারা একে অপরের বিপদে এগিয়ে আসে এবং বিভিন্ন বিষয়ে একে অপরকে সাহায্য–সহযোগিতা করে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কিছু ভালো বন্ধু থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে ভালো বন্ধু নির্বাচনে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তবে বিদ্যালয়জীবনে ভালো বন্ধু থাকা অত্যাবশ্যক।

৬. আমার কোনো দক্ষতা নেই

বিদ্যালয়জীবনে অনেক সহশিক্ষা কার্যক্রম হয়ে থাকে। সেখানে অনেক সহপাঠীকে দেখা যায় যারা অংশগ্রহণ করে ভালো ফল করছে সেখানে। তার মানে এই নয় যে তোমার মধ্যে সেই স্কিল নেই। কে কী বলবে, এটা ভেবে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ না করে চুপ করে বসে থাকা হবে অন্যতম একটি ভুল। তাই বিদ্যালয়জীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা উচিত।

৭. শিক্ষকেরা ইচ্ছা করে পরীক্ষায় কম নম্বর দেন

আমাদের প্রত্যেক মানুষের জীবনে একটি লক্ষ্য থাকে এবং সেই লক্ষ্য পূরণ করতে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন। শিক্ষকেরা ইচ্ছা করে পরীক্ষায় কম নম্বর দেন, এটা আসলে ভুল ধারণা। পরীক্ষার ফলাফলের পর অনেকেই এমন অভিযোগ করে। কৌশলগত পড়াশোনার অভাবে কেউ বেশি নম্বর পায় আবার কেউ কম নম্বর পায়। তাই খারাপ ফলাফল করলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সামনে ভবিষ্যতের ফলাফলটি যাতে ভালো হয়, সে জন্য ব্যর্থ হওয়ার পরপরই লড়াই করতে হবে। মানসিকভাবে আরও দৃঢ় হতে হবে।

Source: Prothom Alo

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top