আপনার সঙ্গে ইলন মাস্কের পার্থক্য যেখানে

ইলন মাস্কের মতো ধনকুবেররা অগাধ সম্পদের মালিক। তবে সম্পদআর আয় তো এক নয়। আর সেটাই তাঁকে আমার-আপনার সঙ্গেআলাদা করেছে। চলুন খোলাসা করা যাক।

ইলন মাস্ক কিংবা তাঁর মতো অতিধনী প্রধান নির্বাহীদের অনেকেইপ্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট হারে বেতন-বোনাস নেন না।সম্পদের যে পরিমাণ দেখে আমাদের চক্ষু চড়কগাছ হয়, সেটা মূলতটেসলা কিংবা স্পেসএক্সের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাঁর শেয়ারেরবর্তমান বাজারমূল্য। আর সে কারণেই টেসলার শেয়ারদর বাড়লে ইলনমাস্ক ধনী থেকে অতিধনী হন, আর শেয়ারের দরপতন হলে আমরাবলি, এক দিনে তিনি এত কোটি ডলার খোয়ালেন।

মাস্কও সুযোগ পেলেই আমাদের সে কথা মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টাকরেন। দিন কয়েক আগেই টুইটারে লিখেছেন, ‘আমার কেবল স্টকআছে, সুতরাং নিজে থেকে কর দিতে হলে আমার একমাত্র উপায় হলোস্টক বিক্রি করা।‘

এখন প্রশ্ন হলো, নাহয় কেবল মাসের শুরুতেই হোক, তবু তোচাকরিজীবীরা কফিশপে ঢুঁ দিতে পারেন ওই বেতনের জোরেই। মাস্ক তোতা-ও পান না। কীভাবে চলেন তিনি? চাল-ডাল থেকে শুরু করেমুঠোফোনের ডেটাপ্যাক কিংবা ব্যাগে করে ডাঁটাশাক তিনি কেনেন কীকরে? এর সোজাসাপটা উত্তর হলো, ধারে চলেন তিনি।

সিএনএন বিজনেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতিধনীরা সচরাচরব্যাংক থেকে ঋণ নেন। তা-ও প্রতিনিয়ত। জামানত হিসেবে উল্লেখকরেন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কিংবা অন্যান্য সম্পদের।

গত আগস্টে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে জমা দেওয়াটেসলার নথিতে উল্লেখ ছিল, টেসলার ৮ কোটি ৮০ লাখ শেয়ারজামানত রেখে মাস্ক ‘ব্যক্তিগত ঋণ’ নিয়েছেন। সে সময় ওই পরিমাণশেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৬ হাজার ৩০০ কোটি ডলার।

যে ফাঁকির সুযোগ নেন অতিধনীরা

আপনি ইলন মাস্ক হলে ব্যাংকে গিয়ে হাত না কচলিয়েই বলতে পারতেন, ‘দাও দেখি বাছা এক কোটি ডলার ঋণ। অনেক দিন ভালোমন্দ খাই না, আজ ছানা দুটো নিয়ে কবজি ডুবিয়ে খাব।’ কেউ যদি এখানেখানাখাদ্যের বদলে ‘ব্যক্তিগত ইয়ট’ কিংবা ‘বিমান’ পড়েন, তবেতাঁদেরও ঠিক দোষ দেওয়া যায় না। যাহোক, এখানে জেনে রাখা ভালো, আয় করলে যেমন কর দিতে হয়, ব্যাংকঋণের ক্ষেত্রে সেটা ঠিক তেমননয়।

চাহিবামাত্র ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার ক্ষমতা ইলন মাস্কদের আছে।ব্যাংকও খুশি মনেই তাঁদের ঋণ দেবে। ধরলাম, সে ঋণের ওপর সুদ ধার্যকরবে ৩ বা ৪ শতাংশ। এখন ইলন মাস্ক যদি ওই এক কোটি ডলার তাঁরশেয়ার বিক্রি করে পেতেন, তবে তাতে মূলধনি লাভের ওপর কর ধার্যেরব্যাপার আসত। ধরলাম, সে করহার ২০ শতাংশের আশপাশে।

তা ছাড়া একজন সিইও চাইলেই যখন–তখন শেয়ার বিক্রি করতে পারেননা। কারণ, সিইও শেয়ার বিক্রি করলে বিনিয়োগকারীরা বিচলিত হন, মনে করেন, প্রতিষ্ঠান নিশ্চয়ই কোনো বড় সমস্যার মুখে। টেসলা-প্রধানের কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে পাওয়া শেয়ারের সামান্য বিক্রিকরেছিলেন বলেই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর চলতি মাসের শুরুর দিকে ৫শতাংশ কমে গিয়েছিল।

ইলন মাস্ক কিংবা আমাজনের জেফ বেজোসের সাম্প্রতিক বছরগুলোতেসামান্য কিংবা একদমই আয়কর না দেওয়ার পেছনে অন্যতম কারণব্যাংক থেকে চাহিবামাত্র স্বল্প সুদে ঋণপ্রাপ্তির এই সুযোগ।

অর্থাৎ ব্যাপারটা দাঁড়াল, টেসলা থেকে ইলন মাস্ক আয় করেন না বলেতাঁকে আয়কর দিতে হয় না। কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে এর বদলে তিনিনির্ধারিত লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রতিষ্ঠানের শেয়ার পান, যা তাঁর সম্পদ।আর সম্পদ যতক্ষণ না বিক্রি করছেন, ততক্ষণ করারোপের প্রশ্ন আসছেনা। আর এই কর ফাঁকির সুযোগই নেন অতিধনীরা। অথচ এইঅতিধনীদের প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কিন্তু ঠিকই আয়কর দিতে হচ্ছে।

ব্যাপারটা হতাশাজনক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় এসে জনসাধারণের জন্যকল্যাণকর বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নেন। সেগুলোর ব্যয় মেটানোর জন্যবিত্তশালীদের ওপর বিশেষ করারোপের পরিকল্পনা পেশ করেছিলেনডেমোক্র্যাটরা। মাস্ক প্রকাশ্যে সে পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন এবংএখন পর্যন্ত তিনি সফল। কারণ, শেষমেশ কংগ্রেস যে বিল অনুমোদনকরেছে, সেখানে ‘ওয়েলথ ট্যাক্স’-এর কোনো উল্লেখ নেই।

আপনাদের হয়তো মনে আছে, ইলন মাস্ক টুইটারে অনুসারীদের ভোটদিয়ে জানাতে বলেছিলেন, কর দেওয়ার জন্য হলেও তাঁর ১০ শতাংশশেয়ার বিক্রি করা উচিত কি না। টেসলায় তাঁর ওই পরিমাণ শেয়ারেরবাজার মূল্য তখন প্রায় ২ হাজার কোটি ডলার। ইলন মাস্ক বলেছিলেন, তাঁর অনুসারী হ্যাঁ বা না, যা-ই বলুক না কেন, তিনি সে মোতাবেক কাজকরবেন। বেশির ভাগ অনুসারী শেয়ার বিক্রির পক্ষে মত দিয়েছেন। এরপর থেকে তিনি কয়েক ধাপে বেশ কিছু শেয়ার বিক্রিও করেছেন। তবেমূল ব্যাপার হলো, কিছু শেয়ার তাঁকে এমনিতেই বিক্রি করতে হতো।সেটা অনুসারীরা বিক্রির বিপক্ষে মত দিলেও।

টেসলায় কাজের জন্য ইলন মাস্কের পারিশ্রমিকের ব্যাপারটি বেশজটিল। তবু একটা ধারণা দেওয়ার জন্য সেটা এভাবে বলা যেতে পারে—২০২০ সালের জুনের মধ্যে টেসলার বাজারমূল্য যদি এত হাজার কোটিডলার ছাড়িয়ে যায়, তবে ইলন মাস্ককে নতুন করে এতগুলো শেয়ারদেওয়া হবে। বিগত বছরগুলোতে টেসলার শেয়ারদর কেমন হু হু করেবেড়েছে, তা আমরা দেখেছি। ইলন মাস্কের ঝুলিতেও প্রতিষ্ঠানের শেয়ারজমা হয়েছে। যে শেয়ারগুলো তাঁকে এমনিতেও ২০২২ সালের আগস্টেরমধ্যে বিক্রি করতেই হবে। বিক্রি না করলে টেসলার প্রায় ২ কোটি শেয়ারহারাবেন তিনি।

তাহলে অযথা এতগুলো টুইট করে বিভ্রান্তি ছড়ালেন কেন? তাঁরমনমেজাজ বোঝার সাধ্য কার!

সূত্র: প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top