অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা

করোনার বাস্তবতায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সৃজনশীল কাজ, বহুনির্বাচনী প্রশ্ন, নির্ধারিত সময় ধরে শ্রেণি পরীক্ষা (ক্লাস টেস্ট) ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া। এসব পরীক্ষা নেওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের ডিভাইসের (ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন) ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন চালু থাকতে হবে।

এভাবেই পরীক্ষার বিষয়ে বিভিন্ন রকমের নির্দেশনা তৈরি করেছে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে সুপারিশ দিতে গঠিত কমিটি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য দিল আফরোজা বেগমের নেতৃত্বে এই কমিটি গঠিত হয়েছিল। আজ বৃহস্পতিবার উপাচার্যদের সঙ্গে ইউজিসির এক সভায় এসব সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়। সেখানেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

দিল আফরোজা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় আলোচনা করে ঠিক করবে, কীভাবে পরীক্ষাটি নেবে। এ বিষয়ে ইউজিসি একটি নির্দেশিকা তৈরি করেছে। সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর মন্ত্রণালয় সেটা পরিপত্র আকারে জারি করলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পাঠানো হবে।

ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, এই কমিটির নির্দেশনায় আরও রয়েছে, তত্ত্বীয় বা ব্যবহারিক পাঠদান অনলাইন বা সশরীরে সম্পন্ন হলে চূড়ান্ত মূল্যায়ন অনলাইনের মাধ্যমে করতে হবে। তবে শুধু যেসব ব্যবহারিক কোর্স হাতে-কলমের কাজ ছাড়া সম্পন্ন করা সম্ভব নয়, তা অবশ্যই সুবিধাজনক সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সশরীরে সম্পন্ন করতে হবে। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে চলমান পদ্ধতি ও স্কেল গ্রেড দিতে হবে।

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ, ইন্টারনেটের গতি, ডিজিটাল ডিভাইস, আন্তর্জাতিকভাবে ফলাফলের গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে নীতিমালা করবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সেটি শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে জানাতে হবে।

এ ছাড়া ব্যবহারিক ক্লাসের ভিডিও সংশ্লিষ্ট বিভাগের ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে এবং তা শিক্ষার্থীদের ই–মেইলে পাঠাতে হবে। শিক্ষার্থীরা এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের কাছে পাঠাবেন। আর ল্যাবভিত্তিক নয় এমন থিসিস বা প্রজেক্টের সুপারভিশন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সশরীরে বা অনলাইনে হতে পারে। অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট প্রাপ্যতা ও প্রয়োজনীয় গতি নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করবে।

করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে ছুটি চলছে। সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা হলো, ২৩ মে স্কুল-কলেজ এবং ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে। কিন্তু ঘোষিত সময়ে খোলা যাবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। দেশে বর্তমানে ৪৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। দীর্ঘ বন্ধে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।


জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ মো. কায়কোবাদ প্রথম আলোকে বলেন, করোনার এই অনিশ্চয়তার মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। এ জন্য পরীক্ষা ও মূল্যায়নও করতে হবে। চ্যালেঞ্জ থাকলেও পরীক্ষাগুলো অনলাইনে নেওয়া সম্ভব। এ জন্য চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সৃজনশীল হতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top